মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের মহানন্দনপুর গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিন ও কাজল রেখার ছেলে মানসিক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শহিদুল (৩৫)। তারা তিন ভাই। এক ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে আর এক ভাই আলাদা সংসার পেতেছে। শহিদুলের ওষুধ আনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ওর বাবা মারা যায়। মা-ছেলের সংসারে শহিদুল ছাড়া উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই এখন। সে এখন পায়ে লোহার শিকল পড়ে স্থানীয় বাজারে ভিক্ষা করে আর সেই টাকা তুলে দেয় মায়ের হাতে। বাবা মারা যাবার পর তার চিকিৎসা করানোর মতো পরিবারে আর কেউ নেই। প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতার টাকায় চলছে মা-বেটার ছোট্ট সংসার। এভাবেই টিনের ভাঙ্গা ঘরটিতে জীবন কেটে যাচ্ছে শহীদুলদের।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শিশুকাল থেকেই তার এ অবস্থা। ছোট থেকেই এলাকার লোকজনকে মারধর ও বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙায় তার পায়ে পরানো হয় লোহার শিকল। শহিদুলের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিন বেলা খাবার জোটে না তাদের। গ্রামের লোকজন মিলে টাকা তুলে শহিদুলের চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাবনা মানসিক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেনি। পরে শহিদুলকে এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এলাকার পল্লী চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধপত্র খাওয়ানো হয়। কিছু দিন ভালো থাকলেও আবার তিনি পাগলামি শুরু করেন। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

শহিদুলের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, শহিদুল বাড়ির বাইরে গেলে, তাকে কেউ কিছু বললে তাদের মারধর করতে যায়। এ ছাড়া হঠাৎ করে গ্রামের শিশুদের গলা ধরে আছাড় মারে। যেন দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য তার পায়ে লোহার বেড়ি পরানো হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শহিদুলের মাথায় সমস্যা ছিল। সে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। তার উন্নত চিকিৎসা হলে সে সুস্থ জীবন ফিরে পাবে। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। বাবা হারানো শহিদুলের চিকিৎসার জন্য তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

শহিদুলের মা কাজল রেখা বেওয়া বলেন, ছেলেটাকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। ঘর ও জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করে। রাস্তায় তাকে কেউ পাগল বললে তাদের মারধর করে।

কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শহিদুল ও তার মায়ের ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে তার সংসার চলে না। শহিদুলের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি। উন্নত চিকিৎসা হলে সুস্থ জীবন ফিরে পাবে শহিদুল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী শহিদুলকে চিকিৎসা করালে ভালো হবে কি না সেটার বিষয়ে জেনে এবং সরকারি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যাতে ওই পরিবার পায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১)