আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : স্বামী সাইদুর রহমান মাসুদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে স্ত্রী মমতাজ আক্তার লিমার দায়ের করা মামলা তুলে না নিলে এসিড মেরে ঝলসে দেয়া এবং পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্ত্রী মমতাজ আক্তার লিমা শনিবার আমতলী প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে এমন লিখিত অভিযোগ দেন। স্বামীর অব্যাহত জীবন নাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ঘটনা ঘটেছে আমতলী পৌর শহরের ফায়ার সার্ভিস এলাকায়।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পটুয়াখালী জেলার শারিখখালী গ্রামের আব্দুল গনি হাওলাদারের কন্যা মমতাজ আক্তার লিমার সাথে আমতলী উপজেলার বাজারখালী গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ হাওলাদারের ছেলে সাইদুর রহমান মাসুদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মাসুদ দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার কথা বলে পনের লক্ষ টাকা যৌতুক নেন। ওই টাকা দিয়ে মাসুদ দক্ষিণ কোরিয়া চলে যান। দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার পর থেকে মাসুম স্ত্রী লিমার খোজ খবর নেয়া বন্ধ করে দেয়।

পরে পূনরায় মোবাইল ফোনে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করেন। কিন্তু এতো টাকা যৌতুক দিতে স্ত্রী লিমার পরিবার অস্বীকার করেন। এর পর থেকে মাসুদ গত তিন বছর স্ত্রীর সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী লিমা ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে স্বামী সাইদুর রহমান মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ বছর ২১ মে স্বামী সাইদুর রহমান মাসুদ দেশে আসেন। স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করবে বলে গত ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অঙ্গীকার দিয়ে জামিনে নেয়। জামিন নিয়েই স্ত্রীর লিমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। মামলা তুলে না নিলে স্ত্রী লিমাকে এসিড মেরে ঝলসে দেয়া এবং পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন সাইদুর এমন অভিযোগ স্ত্রী লিমার।

এদিকে বিয়ের পর স্ত্রী লিমার বাবা আব্দুল গনি হাওলাদার মেয়েকে আমতলী পৌরসভার ফায়ার সার্ভিস এলাকায় ৮ শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য ১২ লক্ষ দেন। ওই টাকা তার স্বামী সাইদুর রহমান নিয়ে যায়। স্ত্রীর সাথে প্রতারনা করে গোপনে সাইদুল তার নামে চার শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি করে নেন। ওই জমিতে লিমার বাবা ঘর নির্মাণ করে দেয়। গত চার বছর ধরে ওই বাড়ী তালা বদ্ধ। কেউ ওই বাড়ীতে বসবাস করছে না। কিন্তু ওই বাড়ীর মালামাল স্ত্রী লিমা ও তার আত্মীয় স্বজন চুরি করেছে মর্মে গত ৯ সেপ্টেম্বর আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী সাইদুর রহমান মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এমন অভিযোগ স্ত্রী লিমার। লিমা আরো অভিযোগ করেন, স্বামী মাসুদ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। তার ভয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

শনিবার আমতলী পৌর শহরের ফায়ার সার্ভিস এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বাড়ীর মুল ফটকে তালা দেয়া। বাড়ির চারিপাশে ঝোপঝারে ভরপুর।

মমতাজ আক্তার লিমা বলেন, বিয়ের পর দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার কথা বলে আমার পরিবারের কাছ থেকে সাইদুর রহমান মাসুদ ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক নেয়। ওই টাকা দিয়ে সে দক্ষিণ কোরিয়া যান। দক্ষিন কোরিয়া যাওয়ার পর থেকেই আমার খোজ খবর নেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর আমার কাছে আরো ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করেন। কিন্তু আমার পরিবার এতো টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এরপর গত তিন বছর ধরে আমার খোজ খবর নেয়া বন্ধ করে দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে পটুয়াখালী নারী ও নির্যাতন দমন আদালতে বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করি। বর্তমানে দেশে এসে ওই মামলা তুলে নিতে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। মামলা তুলে না নিলে আমাকে এসিড মেরে ঝলসে দেয়া এবং পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমি তার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমাকে এবং আমার পরিবারকে হয়রানী করতে আমতলী আদালতে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করে। প্রশাসনের কাছে আমি আমার ও আমার পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চাই।

সাইদুর রহমান মাসুদ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি না বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এন/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১)