স্টাফ রিপোর্টার : নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার মতোই আরেকজনকে সরকার খুঁজতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনই তো নাই। যারা নির্বাচন নিয়ে লেখালেখি করছেন, যারা গবেষণা করছেন, তাদের গবেষণা থেকে আমরা দেখছি, ৫০ বছরে এ আইন তৈরিই হয়নি। রাষ্ট্রপতিই রাষ্ট্রের অভিভাবক, তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন। কিন্তু তিনি কি তা পারছেন?

রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র ফোরামের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী আরও বলেন, আমরা কদিন আগে দেখলাম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আর সংবিধান বলছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন। তাহলে সারসংক্ষেপ তো রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়ার কথা! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এতোই ক্ষমতাশালী যে, রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার ওপরেই তার হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ও প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে? করতে পারেই না। অথচ ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ সাহেবরা বলেন, নির্বাচন কমিশনার আইন অনুযায়ী নিয়োগ হবে। আইনই যেখানে নেই, সেখানে আইন অনুযায়ী হবে কীভাবে? এ থেকেই সরকারের উদ্দেশ্যটা বোঝা যায়।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও নিজেই একটি স্বাধীন সত্তা। সেই স্বাধীন সত্তার যে ক্ষমতা, অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নিজেই আত্মসমর্পণ করতে চান। এ ধরনের নুরুল হুদাদেরই খুঁজে আনতে চান আপনারা। এজন্য নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। কারণ, নিশিরাতে প্রতিদ্বন্দ্বিহীন নির্বাচন জায়েজ করবে কে? এজন্য নুরুল হুদাকে আপনাদের খুব বেশি প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, সাংবাদিকরা কয় টাকা বেতন পান? বাংলাদেশ ব্যাংককে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। অনেকের মাস গেলে খাওয়ার পয়সা থাকে না, অথচ তাদের চেক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সামনে নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচন নিয়ে সরকার নানা ধরনের অরাজকতা করবে। অপতৎপরতা চালাবে। এসব নিয়ে যেন সাংবাদিকরা না লেখেন, যেন সংবাদ প্রচার না করেন। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ- অবরুদ্ধ থাক, কথা বলো না, কণ্ঠস্বর নিচু রাখো।’

দেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আজ নির্বাচন করতে চায় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও কেউ করতে চায় না। কারণ তারা জানে, যদি জিতেও যায়, তবুও নুরুল হুদা শেরেবাংলা নগর থেকে ঘোষণা দেবেন, ‘নৌকা মার্কায় যিনি ছিলেন, তিনি জিতেছেন’। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে বার্তা আসবে, সে বার্তাই বলবেন নুরুল হুদা। তার মতো একজন প্রিয় লোক খোঁজার জন্য যে কাজ করা দরকার, ওবায়দুল কাদের সাহেব ও হাছান মাহমুদ সাহেবরা সে কাজই করে যাবেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষ। এখন এধরনের আরও একজন নুরুল হুদাকে তো খুঁজে বের করতে হবে। গত নির্বাচনে যেমন রাতে ভোট নিয়ে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনেও যেন এভাবেই নির্বাচন করে বৈধতা যেওয়া যায়, তারা এমনই একজন নুরুল হুদাকে খুঁজছেন। এজন্যই সংবিধান বহির্ভূত ও আইন বহির্ভূত কথাবার্তা বলছেন তারা।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আছেন মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিচিত্র কথাবার্তা বলায়। জিয়াউর রহমানের মাজারে জিয়াউর রহমান আছেন কি না; স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার, তার যুদ্ধ নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কোনো প্রকার অনুশোচনা থেকে হয়তো প্রশ্ন তুলতেই পারেন। তার পিতা পাকিস্তান বাহিনী আসার সঙ্গে সঙ্গেই চলে গেলেন। উনি বাসা থেকে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। এসময় একজন মেজর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুশোচনা হতে পারে। তখন জিয়াউর রহমান যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, এটা শেখ হাসিনা সহ্য করতে পারেন না!’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা যতোই অন্যায় করুক, কোনো সমস্যা নেই। শেখ হাসিনা জানেন যে, এরা অপরাধ করেছেন, এরপরেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, যে যতো অন্যায়ই করুক, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বললেই কবিরা গুনাহ মাফ। আর সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একজন হোমরা-চোমরা নেতাও ভালো পদ-পদবি পেয়ে যাবেন।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১)