রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের মারকা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া এসিডে মারাত্মক দগ্ধ হওয়া ওয়াহেদ ঢালি ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর বর্বোরচিত হামলা, নির্যাতন, বসত বাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে ও মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সাতক্ষীরার ৭৯ জন এসিড সারভাইবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। একই সাথে তারা হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। 

সেতুবন্ধন নেটওয়ার্কের আয়োজনে মানববন্ধন চলাকালে শাহানা খাতুনের সভাপতিত্বে এসিড সারভাইবারদের মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, এসিড সারভাইভার নুরুননাহার, সফুরা খাতুন,কাছেদ গাজি, সোনালী খাতুন প্রমূখ।

রবিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের আমতলা মোড়ে মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বহু ঘটনায় এসিডে ঝলসে তারা শারীরিক সক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি সম্পদও হারিয়েছেন। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল প্রতিপক্ষ ওহাব ঢালী ও তার লোকজন অহেদ ঢালীকে এসিড মেরে ঝলসে দেয়। এখন তার দিন মজুর হিসেবে কাজ করে বেঁচে থাকতে হয়। কোন রকমে কুঁড়ে ঘরে বাস করতে হয়। এসিড ছোঁড়ার ঘটনায় বিচার না পাওয়ায় এসিড নিক্ষেপকারিরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। প্রতিপক্ষরা উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান ও সহকারি উপপরিদর্শক তরুন অধিকারীকে দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে বসতঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করে। সহকারি উপপরিদর্শক তরুন অধিকারী অহেদ ঢালীকে ঘর নির্মাণ না করার জন্য হুশিয়ারি দিয়ে যান।

একপর্যায়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে প্রতিপক্ষ ওহাব ঢালী, তার স্ত্রী রাশিদা খাতুন, তাদের ছেলে অদুদ ও লিটন, অদুদের স্ত্রী হীরাসহ অজ্হাতনামা তিনজন তাদের নির্মাণাধীন বাড়ি ভাঙচুর করতে থাকলে অহেদসহ তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন। এ সময় ওহাব ঢালীসহতার সঙ্গে থাকা লোকজন লোহার রড, বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকেসহ স্ত্রী মোমেনা খাতুন, ছেলে আলাউদ্দিন, ছেলে বাবু ঢালী, পুত্রবধু ফাহিমা খাতুনকে পিটিয়ে জখম করে। লোহার রডের আঘাতে অহেদ ঢালীর ডান পায়ের হাঁটুর উপরে, মুখমণ্ডলে ও মেরুদণ্ডে মারাত্মক জখম হয়। স্ত্রী মোমেনার বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়। পুত্রবধু ফাহিমার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে আলমগীর ও বাবু ঢালীর বুকে ও পিঠে জখম করা হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।

বক্তারা বলেন, হামলাকারিদের মধ্যে ওহাব ঢালী, রাশিদা, ওদুদ, লিটন ও হীরা কোন আঘাত ছাড়াই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পরদিন তিন জন পালিয়ে গেলেও রাশিদা ও হীরা ভর্তি থেকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ আব্দুল ওহাব ঢালীর মিথ্যা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করলেও তার দায়েরকৃত অভিযোগ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। এমনকি আব্দুল ওহাবের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার ছেলে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করলেও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তাকে ১৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান ও সহকারি উপপরিদর্শক তরুন অধিকারী জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। ১২ সেপ্টেম্বর ও ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় যেয়ে অহেদ ঢালীর পক্ষে এজাহার দিলেও পুলিশ মামলা না নেওয়ায় রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে এজাহার পাঠানো হয়। শনিবার বিকেলে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। যদিও রাতেই অহেদ ঢালীর দায়েরকৃত এজাহারটি মামলা(১৯) হিসেবে রেকর্ড করাহয়। তবে আসামী ওহাব ঢালীসহ সকলেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না।

বক্তারা আরো বলেন, অহেদ ঢালীর উপর যারা ২০০৮ সালে এসিড ছুঁড়েছিল তাদের বিচার হলে আজ এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না। ফলে এসিড সন্ত্রাসীরা পুলিশকে ম্যানেজ করে আবারো হামলা চালিয়েছে। অথচ মামলা খেয়েছে অহেদ ঢালীর পরিবারের সদস্যরা। অহেদ ঢালী, তার স্ত্রী মোমেনা ও পুত্রবধু ফাহিমার আঘাত গুরুতর। তবে প্রতিপক্ষের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না বলে ডাঃ তৈয়বুর রহমান জানালেও হামলাকারিদের মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। তাই অবিলম্বে অহেদ ঢালী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গ্রেপ্তার করতে হবে অহেদ ঢালী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলাকারিদের।

জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, শনিবার রাতে অহেদ ঢালীর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১)