এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে দুটি জমজ শিশু সন্তানকে রাস্তার উপর ফেলে রেখে এক পাষন্ড মায়ের উধাও হবার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি জানার পর অধিকাংশ মানুষের অভিমত কি ভাবে মা হয়ে এরকম কাজ করতে পেরেছে। আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের জমজ দুই ছেলে শিশু সন্তানকে এসপি অফিসের সামনে ফেলে রেখে চলে গেছে এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। ঘটনার পর উদ্ধার করা দুই শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে থানা পুলিশ। শিশু দুটির বাবা চিকিৎসার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রোববার বিকেলে এসপি অফিসের সামনে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায় শিশু দুটির মা। এমনটাই দাবি করেছে এই পাষন্ড মা সুমাইয়া।  

থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। সে বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তাঁর বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে। ২০১৯ সালের মে মাসে শিশু দুটির মা সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সাথে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে এ বছরের মার্চ মাসে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের সময় সিদ্ধান্ত হয় শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য পুলিশ কনস্টেবল ইমরান প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা দিবেন। কিন্তু শিশু দুটির মা সুমাইয়ার দাবি বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে তাঁর সন্তানদের কোন ভরণপোষণ দিচ্ছেনা ইমরান। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানী মাহফূজ মিয়া জানায়, বিকাল বেলা একজন নারী তাঁর দুই শিশু সন্তানকে চেক পোষ্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে চলে যান। যাবার সময় সে বলে যায়, তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক।

রাতে ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু দুটির কান্নায় থানার পারিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের এক নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরের তাপমত্রা ছিল অনেক বেশি।

সুমাইয়া আক্তার মোবাইলে জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোববার সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বলেন। এতে প্রায় প্রায় ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি কনস্টেবল ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। এমনকি বিচ্ছেদের পর এক বারের জন্যও তাঁর সন্তানদের খোঁজ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে এসপি সাহেবের সাথে দেখা করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের সেখানে রেখে চলে এসেছি।

কনস্টেবল ইমরান মোবাইলে জানান, প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য তিন হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাঁদের খোঁজ খবর নেই। কিন্তু মা হয়ে সে কিভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি পারিবারিক ভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুটির দাদা দাদীকে খবর দেয়া হয়েছে। তাঁরা আসলে শিশু দুটিকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়া হবে।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১)