এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : মেহেদী হাসান (১৬) নামের এক কিশোর বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার অভিযোগে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রাম্য মাতব্বরসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। 

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের মাতব্বর ও গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম (৫২), একই গ্রামের শফিউল ইসলাম খোকন (৫৫) ও তারেক রহমান (২০)।

জানা যায়, কিশোর বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেনের ছেলে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর আর্থিক অনটনের কারণে মেহেদী হাসানের শিক্ষাজীবন অার এগোতে পারেনি। এরপর তার দাদা আলম মন্ডলের বাড়িতে তিনি বসবাস করতেন। পার্শ্ববর্তী ধাওয়াগী গ্রামের মতিন বাউলের সাথে পরিচয় সূত্রে তার সাথে চলাফেরা শুরু করেন। গত কয়েক বছর যাবৎ মেহেদী হাসান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মতিন বাউলের সঙ্গে বাউল গান গেয়ে উপার্জিত টাকায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। বাউল শিল্পী হওয়ার কারণে মেহেদী হাসানের বেশভূষায় ছিল- সাদা লুঙ্গি, সাদা ফতুয়া, সাদা গামছা এবং মাথায় বড় লম্বা বাবরী চুল।

মেহেদী হাসানের বেশভূষা নিয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় অশালীন মন্তব্য করে আসছিলেন। অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় গ্রেফতারকৃত ৩ জনসহ আরো ৩-৪ জন গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত দশটার দিকে আলম মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে মেহেদী হাসানকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে চুল কাটা মেশিন দিয়ে জোরপূর্বক তার মাথা ন্যাড়া করে দেয়। মাতব্বররা হুমকি দেয় যে, বাউল গান ছাড়তে হবে এবং মাথার চুল বড় করলে গ্রাম ছাড়া করা হবে।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার খবর পাওয়া মাত্র মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে মেহেদী হাসান বাদী হয়ে আটক ৩ জনসহ ৫ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার সংবাদ পেয়ে বাউল শিল্পীকে থানায় এনে বিস্তারিত অবগত হয়ে অভিযান চালানো হয়। ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আরো ২ জন পলাতক রয়েছেন।

(এটিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১)