মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : বয়সে সবাই শিশু, কারো চোখের ছানিতে সমস্যা,কারো বা চোখের নালিতে সমস্যা। মুক্ত পৃথিবীতে আলো দেখার জন্য শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখের জটিল সব সমস্যা নিয়েই ওদের বেড়ে উঠা। এসব শিশুর উদ্বিগ্ন অভিবাবকরাও সিদ্ধান্ত নিলেন চোখের অস্ত্রপাচারে সফল বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি (বিএনএসবি) পরিচালিত মৌলভীবাজারের বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করাবেন বলে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে গত বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভর্তি করা হয় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১৯ জন শিশুকে। ভর্তির পর নানা পরিক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন শেষে ভাটি অঞ্চলের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা একই বয়সের ১৯ জন শিশুর চোখে জটিল অস্ত্রপাচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়।

ওই হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: আমিনুল ইসলাম সোহাগের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি শক্তিশালী টিম হাসপাতালের অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার কক্ষে এসব শিশুদের চোখে জটিল অস্ত্রপাচার সম্পন্ন করেন বলে হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এহসানুল মান্নান বলেন, সফলভাবে চোখের অস্ত্রপাচার সম্পন্ন হওয়া শিশুদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালনা,তাদেরকে বিনামূল্যে অস্ত্রপাচার করা হয়। যাদের আর্থিক অবস্থা ভাল,তাদেরকে সল্পমূল্যে অস্ত্রপাচার করা হয়। তিনি জানান, অস্ত্রপাচার সম্পন্ন হওয়া শিশুদের চোখের অবস্থা ছিলো খুবই জটিল, আমাদের এই হাসপাতালে সাপ্তাহে কিংবা ১৫দিন পরপরই চোখের নানা সমস্যায় পড়া এরকম শিশুদের চোখে অস্ত্রপাচার সফলভাবেই সম্পন্ন করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং দেশি-বিদেশি অন্যান্য দাতাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি (বিএনএসবি) পরিচালিত মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালটি একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল হিসেবে রূপ লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চোখের উন্নত সব চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটির সৃুনাম পুরো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যায়। মৌলভীবাজার ছাড়াও ঢাকা, চট্রগ্রাম,ময়মনসিংহ,রংপুর,দিনাজপুর,কুমিল্লা ও চাঁদপুরে রয়েছে বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি পরিচালিত হাসপাতাল। ১শ শয্যার এই হাসপাতালটিতে এ-স্ক্যান, বি-স্ক্যান, লেজার চিকিৎসা, ওয়ান-স্টপ ছানি ক্লিনিক, ডায়াবেটিক ইউনিট, গ্লুকোমা ইউনিট, অকুলার মাইক্রোবায়োলিকিক পরীক্ষাগার, ইন্ট্রাকুলার লেন্স ও ফ্যাকো সার্ভিস, বিশেষ পেডিয়াট্রিক ইউনিটসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে এখানে। রয়েছে অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। এছাড়াও রেটিনা ইউনিট নামে একটি বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে এই হাসপাতালে।

হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির অবৈতনিক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১৭ সালে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মোসাহিদ আহমদ চুন্নু। তিনি দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর হাসপাতালটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আসে নানা পরিবর্তন। ১১ শয্যার হাসপাতালটি বর্তমানে ১শ শয্যা হাসপাতালে রূপ নেয়। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে ‘প্রতিবন্ধিতা উত্তরণ সম্মাননা-২০১৮’ পদকও পান তিনি।

হাসপাতালটির অবৈতনিক নির্বাচিত সাধারণ সৈয়দ মোসাহিদ আহমদ চুন্নু জানান, এখানে সব চিকিৎসাই স্বল্প খরচে সম্পন্ন করা হয়। এখানে আসা কোনা রোগী টাকা দিতে না পারলেও তার চোখের অপারেশনসহ যাবতীয় চিকিৎসা করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১)