টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গালিগালাজ করায় পাঁচ কোটি টাকার মানহানি মামলা
মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর রহমান খানকে আলোচনা সভায় প্রকাশ্যে ‘রাজাকার’ ও ‘মীর জাফর’ বলায় টাঙ্গাইলের আদালতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু ও ইউটিউবার জনৈক আশিককে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজুকে প্রধান আসামি করে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী (ঘাটাইল থানা) আদালতে মামলা দায়ের (সিআর-৩৭৭/ ২০২১ইং) করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ঘাটাইল থানা পুলিশকে তদন্ত করে আগামি ১৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে কাজী আরজু উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর রহমান খানকে রাজাকার ও মীর জাফর আখ্যায়িত করে নানা রকম গালিগালাজ করেন। পরে সেই ভিডিও ঘাটাইল মিডিয়া নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। এতে সংক্ষুব্দ বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবর রহমান খানের পাঁচ কোটি টাকা বা সমমানের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। মামলায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু ছাড়াও ইউটিউবার জনৈক আশিককে আসামি করা হয়েছে। মামলায় স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ আট ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার বাদী মো. মজিবর রহমান জানান, তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির জন্য কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সনদপত্র, কাদেরিয়া বাহিনীর মূল্যায়নপত্র রয়েছে। এছাড়া লাল মুক্তিবার্তা ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন উদ্দেশ্যে এহেন অপরাধ করেছে। তিনি গৌরাঙ্গী গ্রামের কাজী জুব্বারের ছেলে কাজী আরজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন জানান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে যে কটুক্তি করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দেবে। তবে তিনি কটুক্তিকারীর শাস্তি দাবি করেন।
ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু জানান, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শত্রুতা বসত: রাজাকার ও মীর জাফর বলা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির আদৌ উচিত হয়নি। এটা তিনি কোনভাবেই বলতে পারেন না। এতে উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় কাজী আরজু এহেন বক্তব্য রেখে অপরাধ করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচাজর্ (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১)