আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে হঠাৎ শুরু হয়েছে কথিত ‘অনুপ্রবেশকারী’ উচ্ছেদ অভিযান। স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করলে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তাদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, কথিত ‘অনুপ্রবেশকারী’ উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। রাজ্যের দরং জেলার ঢলপুরের গরুখুঁটিতে চলছিল এ অভিযান। তখনই সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় পুলিশ গুলি চালালে মৃত্যু হয় দুই প্রতিবাদকারীর।

পুলিশের অভিযোগ, তাদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। অভিযানরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আচমকা পাথরবৃষ্টি শুরু হয়। পাথরের আঘাতে আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায় পুলিশ। এতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

আসামের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী মনে করে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। সেখানকার কট্টরপন্থিরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক বাসিন্দা আসামে ঢুকে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন এবং রাজ্যের জনতাত্ত্বিক চিত্র বদলে দিচ্ছেন। ‘অভিবাসী মুসলিমদের এই আধিপত্য’ থেকে ‘স্থানীয়দের সুরক্ষা’ দিতে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বিজেপি।

এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে সেখানে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরি করে সরকার। রাজ্যের তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে দুই কোটি ৯০ লাখ মানুষের জায়গা হয় ওই নাগরিকপঞ্জিতে। বাদ পড়েন প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা, এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাভাষী।

সেই নাগরিকপঞ্জি বাস্তবায়নে এবং কথিত ‘অভিবাসী’ মুসলিমবিরোধী নানা কার্যক্রম চালিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আসামের নির্বাচনে সরকার গঠন করে বিজেপি। সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা, যিনি বরাবরই কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও মুসলিমবিরোধী হিসেবে পরিচিত।

নতুন সরকারে ক্ষমতাগ্রহণের একমাসের মাথায় গত জুনে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাজ্যের অভিবাসী মুসলিমদের সঠিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা করতেই হবে। মুসলিমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করলে (আসামের) কামাখ্যা মন্দিরের জমিও জবরদখল হয়ে যেতে পারে।

তার এই বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। মুখ্যমন্ত্রীর এমন সাম্প্রদায়িক বক্তব্যে প্রবল আপত্তি জানায় আসামের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট ও সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়ন। সংবাদ প্রতিদিন।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)