স্টাফ রিপোর্টার : দ্রুত পর্যটন প্রবৃদ্ধি অর্জনে তারুণ্যেকে যদি সাইক্লিং উৎসাহিত করা যায়, এ শিল্পে সহজ ও সাশ্রয়ী নিরাপদ ভ্রমণ অন্তর্ভুক্তি হলে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হবে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এদেশ আজ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দ্রুত বর্ধিত অর্থনীতির একটি দেশ। অনেক আগেই ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ। মহামারীর প্রভাব দীর্ঘতর হওয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এবং পুনরায় লকডাউন ঘোষণার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে শ্লগতি বিরাজমান থাকায় আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির পরিসর ৭ দশমিক ২ শতাংশের মতো বাড়বে বলে সরকার আশা করছে। তাই পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিং উদ্যোগে আজ ২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, সকাল ৯.০০টায়, জাতীয় জাদুঘরের সামনে, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে “নিরাপদ ভ্রমণ করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন” স্লোগানে একটি সাইকেল র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিং এর প্রধান সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম টুব্বুস-এর সভাপতিত্বে উক্ত সাইকেল র‌্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিং এর সমন্বয়ক রজিনা আক্তার দুনিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিং ক্লাব এর সভাপতি নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমেদ, বিডিক্লিক এর সহ-সভাপতি দিদার হোসেন পাটোয়ারী, গ্রিণফোর্স এর সদস্য আহসান হাবীব সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।

পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সাইকেল শুধুমাত্র যাতায়াতের জন্য নয়; পরিবেশের অন্যতম প্রধান বাহন এই সাইকেল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা এই সাইকেল চলাচল কে নিরাপদ করতে পারিনি। আজকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হবে আমরা নিজেরা নিরাপদে সাইকেল চলাচল করবো এবং অন্যের অসুবিধার কারন হবো না। তিরি আরো বলেন সাইকেল লেন সহ সাইকেল চলাচলের অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা গুলো দূর করা দরকার এবং সাইকেল সচেতনতামূলক প্রচারণার জন্য বিশ^বিদ্যালয় সহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা রাখতে হবে।

মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, সাইক্লিং যারা করেন তারা কখনো মাদকাসক্ত হন না। তারা নিজেদের সকল অপকর্ম থেকে দূরে রাখেন। সাইকেল চালানো শুধু শারীরিক ব্যায়াম নয় এটি সুন্দর মানসিকতা গড়ে উঠতে সহায়ক। তাই প্রতিটি পরিবার থেকে সাইকেল চালানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, স্বল্প সময়ে, স্বল্প আয়ের মানুষ, কম খরচে নিরাপদ ভ্রমণে; ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব উদ্যোগে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ধীর গতিতে হলেও এই শিল্পের উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার কারণে পর্যটন শিল্পের এই অগ্রগতি। ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপেটেটিভনেস রিপোর্ট-এ যা ২০১৭ সালে ছিল ১২৫তম।

সুতরাং এর সঙ্গে জড়িত মূলত সাহায্য। এলডিসি জাতিসংঘের তালিকায় আছে। এর ফলে এই দেশগুলো উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাজার-সুবিধা পেয়ে থাকে। সুতরাং এর সঙ্গে জড়িত নানা সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আমরা মধ্যম দেশের আয় উপাধি পেয়েছি এবং আমরা চাই এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিক সুযোগ সুযোগ সুবিধা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় বিনোদন ও ভ্রমণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এমনকি ভ্রমণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি বর্তমান পর্যটন শিল্প বাঁচাতে, এ সংকট ও প্রভাব স্বল্প সময়ে হ্রাস করতে এবং পর্যটন শিল্প আগের অবস্থায় ফিরে আনতে ট্যুরিস্ট সাইক্লিং সেবার কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বেশী ভ্রমণ করে বেড়ায় একজন সাইক্লিস্ট। এর অন্যতম কারণ সহজ ও সাশ্রয়ী নিরাপদ ভ্রমণে তারুণ্য। এ মাধ্যমে যে আনন্দ উপভোগ তৈরি করার সুযোগ পেয়ে থাকেন, তা অন্যকোন মাধ্যমে স্বল্প সময়ে সাচ্ছন্দ্য ও সন্তোষ প্রকাশের সামান্য হলেও বিশাল স্মৃতিচারণে অনুধাবিত হচ্ছে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি শিল্প বহিঃপ্রকাশে অনন্য ভূমিকায় সাইক্লিং বহি বিশ্বে অবতীর্ণ হয়েছে। কথায় আছে, যত প্রচার- ততোই প্রসার! আমাদের পর্যটন শিল্পে সাইক্লিং তেমন কোন প্রচারণা দৃষ্টিনন্দন করতে দেখা যায় না, তরুণ সাইক্লিস্টরা সপ্তাহের ছুটি বা বিভিন্ন দিবসের ছুটির দিন গুলোতে দলবেঁধে যখন ভ্রমণ করতে যায়, ঝাকে ঝাকে আকাশের পাখি দেখা ভুলে মানুষ সাইক্লিস্টদের দেখে অনুপ্রাণিত হয় ভ্রমনে। করোনা মহামারিতে গণপরিবহন এড়িয়ে সাইক্লিং গুরুত্ব বাড়ার কারণে ভ্রমণের গতি ত্বরান্বিত করতে বিডি টুরিস্ট সাইক্লিং সেবা আমরা চালু করেছি।

করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় বিনোদন ও ভ্রমণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এমনকি ভ্রমণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি বর্তমান পর্যটন শিল্প বাঁচাতে বাজেটে অধিক গুরুত্ব এ সংকট ও প্রভাব যদিও স্বল্প সময়ে হ্রাস করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অনান্য বিষয়ের মত পর্যটন শিল্পে টুরিস্ট সাইক্লিং সেবা অন্তর্ভুক্তি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আর্থিক প্রযুক্তির বর্ধিত ও বহুমাত্রিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অন্তর্ক্তুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে শক্ত অবস্থান তৈরিতে পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটিলে ভবিষ্যতে 'দ্রুত পর্যটন প্রবৃদ্ধি অর্জনের আগের অবস্থায় ফিরে আসতে দেশ ব্যাপী সাইক্লিং অন্তর্ভুক্তিমূলক তারুণ্যে উৎসাহিত তৈরি করা যায়, যেভাবে বিগত বিশ্ব পর্যটন দিবসে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ মাহাবুব আলী সাইকেল চালিয়ে তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন। এতে পর্যটন শিল্পের বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং শিল্প খাতে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারে গঠিত হয় ট্যুরিস্ট সাইক্লিং সেবা ও পর্যটন শিল্পে উন্নয়নের ম্যাজিক এবং দ্রুত পর্যটন প্রবৃদ্ধি অর্জনে তারুণ্যেকে যদি সাইক্লিং উৎসাহিত করা যায়, এ শিল্পে সহজ ও সাশ্রয়ী নিরাপদ ভ্রমণ অন্তর্ভুক্তি হলে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হবে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ।

সুপারিশ সমূহঃ

১. সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যেমন- বাসা থেকে কর্ম স্থান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত করতে হবে।

২. সাইকেল বান্ধব অবকাঠামো তৈরি।

৩. সাইকেল আরোহীদের আরো সচেতনভাবে সাইকেল চালানোর জন্য সর্তক করা এবং নিয়ম মেনে সাইকেল চালাতে উৎসাহিত করা।

৪. সাইকেল লেন ব্যবহার করার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা।

৫. পরিবেশবান্ধব এই বাহনটি ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাইক্লিং এর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৬. দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য নিরাপদ সড়ক ও সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করা।

৭. যে স্বল্প পরিমাণ সাইকেল লেন আছে তা দখলমুক্ত করে নিরাপদ সাইক্লিং করার নিশ্চয়তা প্রদান করা।

৮. পারিবারিকভাবে সন্তানকে সাইকেল চালানোয় উৎসাহিত করার জন্য জনমত গড়ে তোলা

৯. দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সাইকেল পার্কিং সুব্যবস্থা রাখতে হবে

১০. দেশী-বিদেশী ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টদের সরকারি সুযোগ সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা করতে হবে।

(পিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)