এ কে আজাদ, রাজবাড়ী : সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম ঘোষণা করেছেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী।

বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের পালকি রেস্টুরেন্টে কাজী কেরামত আলী এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, কোষাধ্যক্ষ আগজর আলী, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার আবুল হোসেন, ও ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি আসাদুজ্জামান শামীমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কাজী কেরামত আলী বলেন, জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো প্রার্থী কে কে। আমি বলেছিলাম জিল্লুল হাকিম ও আকবর আলী মর্জি সভাপতি প্রার্থী এছাড়া সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কাজী ইরাদত আলী, মোহাম্মদ আলী চৌধুরি ও শেখ সোহেল রানা টিপু। এ সময় আমার নামটি বলি নাই, তবে পরিস্থিতি পর্যালচনা করে দেখলাম সভাপতি হিসেবে নিজের নামটি দেওয়া দরকার। কারণ এই দুই জনের হাত থেকে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে হবে। এ জন্যই আজ সাংবাদিক ভাইদের ডাকা।

সংবাদ সম্মেলনের জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আপন ছোট ভাই কাজী ইরাদত আলী দলের মধ্যে এক নায়ক তন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী। সে আরও বলেন, আমি ৪ বার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আগে আমার ছোট ভাই কাজী ইরাদত আলী কে লিখিত ভাবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দেই। পরবর্তীতে তার কর্ম কান্ড আমাকে কষ্ট দিয়েছে, ব্যথিত করেছে। কারণ আমি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দল পরিচালনায় সব কিছু শেয়ার করতাম। কাজ করতে গেলে ভালো মন্দ আলোচনা করতাম। কিন্তু সে দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের মধ্যে আমার নির্বাচনি এলাকা রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে নেতা কর্মীদের মধ্যে ডিভিশন তৈরি করেছে।

সে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি নেতাকর্মীদের থ্রেট করে এমপির সাথে রাজনীতি করা যাবে না, সে আওয়ামীলীগকে ব্যক্তিগত দল বানাতে চলেছে। একই অবস্থা করে চলেছে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম তার নিজ নির্বাচনি এলাকা পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালিতে। সেখানেও প্রকৃত আওয়ামীলীগের অবস্থা খুব খারাপ। কারণ সেও বিএনপি ও অন্য দল থেকে আসাদের নিয়ে রাজনীতি পরিচালনা করে চলেছে।

আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আরও কিছু নেতা কর্মী আসতো, কিন্তু কিছুক্ষণ আগে তাদের কে হুমকি দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা এখানে কেউ না আসে। এ রকম ভাবনা থাকলে সংগঠন শক্তিশালী হয় না। সব সময় থ্রেডের মধ্যে থাকার কারনে তৃণমুল নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব কে মোবাইলে হুমকি দেওয়া হয়েছে যে কোন মতেই সংবাদ সম্মেলনে যেতে পারবেন না। না হলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, গোয়ালন্দ থানা কমিটি করা হয়েছে। নতুন এই কমিটিতে পূর্বের কমিটির প্রায় ৩৫ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরা বাদ পড়ার একটাই কারণ আমাকে তারা ভালো বাসে। এর নাম তো রাজনীতি না। একদিন জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে একটা অনুষ্ঠানে আমাকে প্রধান অতিথি করা হলো, আমি দেখলাম আমার ভাই ইরাদত আলী আমার পরে বক্তব্য দিবে। আমি আস্তে করে সেখান থেকে চলে আসলাম। শুরু পার্টির কর্মসূচি পালন করলাম তৃনমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন করলাম না, তাদের কে সব সময় থ্রেডের উপর রাখলাম, ভয় ভিতি দেখালাম, হুমকি দিলাম এর নাম কি রাজনীতি? এতে গ্রুপিং হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মনে মনে হয়তো আমার কষ্টো পাচ্ছি এই কষ্টের কারনেই নিজেদের মধ্যে দুরুত্বের সৃষ্টি হচ্ছে।

জেলা কমিটির বর্ধিত সভা ভালো মতোই হয়েছে। আমরা আশংকা করেছিলাম হয়তো বড় ধরনের গোলমাল হতে পারে। কারণ প্রার্থীদের মধ্যে পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালিতে গ্রুপিং চলছে। আমাদের এখানে গোলমাল হয় নাই। কিন্তু মৃধ কলেজের কাছে শেখ সোহেল রানা টিপুর কি সমর্থক দের মারধর করা হয়েছে ওদুদ মন্ডল থাকতে পারে ভেবে গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এর নাম তো রাজনীতি না। দলের মধ্যে এমন উচ্ছৃঙ্খলা থাকে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে পতিযোগিতা করতে গিয়ে তাকে ধমুক দিয়ে বসিয়ে দেন। এটা কি কখনো রাজনীতি হলো ।

তিনি এছাড়াও বলেন, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালিতে পরিস্থিতি এমন যে পুনরায় নতুন করে জিল্লুল হাকিম কে সভাপতি ঘোষণা না দেওয়া হোক। পরিস্থিতি এমন যে ওনি যদি আবার সভাপতি হয়ে আসেন আমাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। কালুখালি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা পেলেন কাজী সাইফুল। কিন্তু নৌকার বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে টিটো চৌধুরীর পক্ষে কাজ করলেন জিল্লুল হাকিম। যে কোন লোক জিল্লুল হাকিমের বিপক্ষে গেলেই তার কপালে দুঃখ আছে। তার আর ওই এলাকায় বসবাস করার সুযোগ নাই।

দখলের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। কারণ দেখলাম বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে শহর দখল করে নিজের ফেস্টুনে ভরে রেখেছে ইরাদত আলী। আমি আমার পি এ রওশন কে বললাম রওশন শহরে এত ফেস্টুন লাগানো হয়েছে তুমি আমার দুই একটা ফেস্টুন লাগাবা না। তারপর ওই সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেস্টুন প্রিন্ট করলাম। রাস্তায় লাগাতে গিয়ে দেখি সারা রাস্তা দড়ি দিয়ে টানানো। তারপর শ্রিপুরে রাতে যখন ফেস্টুন টানাতে গেছে রওশন, তখন ইরাদত গিয়ে বলে যেখানে দড়ি টানানো আছে সেখানে তুমরা ফেস্টুন লাগাতে পারবা না। তারপর দেখা গেল তার যে প্রযন্ত ফেস্টুন লাগিয়েছে তার পর থেকে তারা দড়ি টানিয়ে রেখেছে যাতে অন্য কেউ লাগাতে না পারে। এই রাজনীতি তো করা ঠিক না৷
এখন রাজবাড়ী জেলায় আমার ভাস্তে সান্তুনু ও মিতুল হাকিম সন্ত্রাসী বাহিনী চালাছে। তাদের কথা যারা মানবে না তাদের আর রাজবাড়ী জেলায় থাকা হবে না।থাকলেও হতে হচ্ছে খুন। এভাবে চলতে থাকতে পারে না এর সমাধান চাই। যদি কেউ মনে করে বর্ধিত সভায় অনেক লোক হয়েছে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের অনেক শক্তিশালী সব ভুল। এরা বেশির ভাগ বিএনপির লোক। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আনা হয়েছে। মুল ধারার আওয়ামীলীগরা এই দুই নেতার সাথে নাই।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদেরকে একটা মেসেজ দিচ্ছি আপনারা যে রাজনীতি শুরু করছেন এটা চিরকাল থাকবে না। হুমকি ধামকি দিয়া মানুষ কে কাছে আনা যায় না। আপনারা যে নিজেদের রাজনীতি কায়েম করতে চাচ্ছেন সেটা শেখ হাসিনা মেনে নেবে না।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)