রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ী সদর উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরসিলিমপুর গ্রামের চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মার গর্ভে তলিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, আজ দুপুর ১২টার দিক থেকে ভাঙন শুরু হয়। কয়েক দিন আগেও ভাঙন হয়েছিল। মাঝখানে কয়েক দিন ভাঙন বন্ধ ছিল। আজ হঠাৎ ভাঙন শুরু হলে বিদ্যালয়ের কিছু আসবাবপত্র পাশের টিনশেড ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে ভাঙনের কবলে ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এই ভাঙন বন্ধ না হলে অনেক পরিবার বসতবাড়ি হারাবে।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের পাশে প্রায় ১০০ মিটার জায়গা ভাঙনের কবলে রয়েছে। মানুষ নদীভাঙন দেখছে। কেউ কেউ আহাজারি করছে। আবার কেউ মুঠোফোনে ভাঙনের ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। বিদ্যালয়ের পাশের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। একটু পরপর নদীর পাড় ভেঙে পড়ছে। বিকেল চারটার দিকে বালুভর্তি বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়।

চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সবদুল হোসেন বলেন, ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আগে এই এলাকা খুব জনবসতিপূর্ণ ছিল। কিন্তু নদীভাঙনের ফলে অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে অন্য স্থানে চলে গেছেন। বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। আশপাশে আর কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, নদীশাসনের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবহেলা করায় বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মায় বিলীন হলো। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘স্কুলটি নদীতে চলে গেল। স্কুলের মাঠও নদীতে চলে যাচ্ছে। এই মাঠে কত খেলাধুলা করেছি। এখন আর আমরা এই বিদ্যালয়ে পড়তে পারব না। আমাদের এখানে আর কোনো স্কুলও নেই। আমার খুব খারাপ লাগছে।’

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবু তালেব বলেন, স্কুলের আশপাশ এলাকায় বসতভিটাও হুমকির মুখে। জনগণের জানমাল রক্ষার দাবি জানাচ্ছেন। কারণ, নদীভাঙনের শিকার হলে পরিবারগুলো একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবে।

বিদ্যালয়ের মাঠে আহাজারি করছিলেন রাশিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি নিঃসন্তান। আমি দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন এখানে বাড়ি করেছি। বাড়িটি যেকোনো সময় ভেঙে যাবে। আমার আয়রোজগার করার মতো কেউ নেই। আমি এখন কী করব?’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই এখানে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বালুর বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে। ভাঙন যাতে আর বৃদ্ধি না পায় এবং এই এলাকা রক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া একই এলাকায় ড্রেজিং করার কথাও বলা হয়।

ড্রেজিংয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। কাজের দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩১ মে। কাজের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। অপর দিকে গোদার বাজার এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকার সংস্কারকাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়। কাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছরের ৩১ মে। ২৭ জুলাই থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১)