লাইফস্টাইল ডেস্ক : পরনিন্দা করা মোটেও ভালো কাজ নয়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, পরনিন্দা ও পরচর্চা করা একেবারেই খারাপ নয়। তবে এতে যেন কারও বিপদ বা ক্ষতি না হয়।

গবেষকদের দাবি, গসিপ বা পরচর্চারও আছে বেশ কিছু উপকার। তাই সুযোগ পেলেই কারও নামে গসিপ করতে চাইলে তা করতেই পারেন। তবে যার বিষয়ে গসিপ করবেন তার যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, পরচর্চা করলে রাগ, আক্রোশ ও মানসিক চাপ থেকে কিছুটা মুক্তি মেলে। তাই এমন বন্ধুকে বেছে নিন যার সঙ্গে গসিপ করলে আপনার মন হালকা হয়ে যাবে।

সবার জীবনেই এমন কিছু মানুষ থাকেন যারা অপ্রিয়। গবেষকরা বলছেন, এই অবস্থায় নির্দিষ্ট ব্য়ক্তির উপর রাগ চেপে না রেখে বরং তার নামে আপনার প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে গসিপ করুন।

তাহলে দেখবেন, আর ক্রোধে বা ক্ষোভে ভুগবেন না। হালকা থাকবেন আর মানসিক চাপও কমে যাবে। তবে যার কাছে অন্যকে নিয়ে পরচর্চা করছেন তিনি যেন বিশ্বস্ত হন।

গবেষকদের মতে, পরচর্চা করার সময় কিন্তু খারাপ শব্দচয়ন করবেন না। সচেতনভাবে শব্দ প্রয়োগ করুন। তবে অফিসে গসিপ করার বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা। অফিসের পরিস্থিতি বুঝে তবেই গসিপে অংশ নিন। অফিসে নিজে থাকুন সচেতন।

পরচর্চা করলে অন্যের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। গবেষকদের মতে, পরচর্চা করা একধরনের স্ট্রেস বাস্টার। তবে মাথায় রাখুন, আপনার গসিপে যেন কেউ গভীরভাবে আঘাত না পায়।

১৯৯৩ সালের একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ পরচর্চা করেছেন। সে হিসেবে পরচর্চায় পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে।

জার্নাল সোশ্যাল সাইকোলজিক্যাল অ্যান্ড পার্সোনালিটি সায়েন্সে প্রকাশিত ২০১৯ সালের মেটা-বিশ্লেষণের এক উদাহরণ অনুযায়ী, পরচর্চা সবসময় নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচকও হতে পারে।

যেমন- রবিনসের এক সহকর্মী প্রতিদিন গড়ে ৫ মিনিটের মধ্যে ৭টি বিষয় গসিপ করেন। তবে সেই গসিপের তিন-চতুর্থাংশই নিরপেক্ষ।’

উদাহরণস্বরূপ রবিনস বলেন, তিনি এমন একজনের কথা বলেছেন যিনি প্রচুর সিনেমা দেখেন। ওই সহকর্মী তার সম্পর্কে গসিপ করার ক্ষেত্রে বলেন, ‘তার এই বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর’। গবেষকদের মতে, এ ধরনের পরচর্চা কিন্তু মোটেও মূল্যবান ও নেতিবাচক নয়।

পরচর্চা করলে হয়তো মানসিক প্রশান্তি আসে, তবে যিনি পরচর্চা শোনেন তার মস্তিষ্কে কী ঘটে? এ বিষয়টি দেখতেও গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। সোশ্যাল নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের ইমেজিং করেন।

বিজ্ঞানীরা দেখেন, এই নারী-পুরুষরা যখন তাদের সেরা বন্ধু ও সেলিব্রিটিদের সম্পর্কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক গসিপ শুনেছেন, তখন তাদের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যকারিতা বেড়েছে।

গবেষকদের মতে, কিছু ধরণের গসিপ আছে যা এড়ানো উচিত। যেমন- কারও চেহারা বা ফিটনেস সম্পর্কে গড় মন্তব্য ইত্যাদি কখনও মূল্যবান পরচর্চা নয়।

এমন পরিস্থিতিতে কিন্তু আপনি কিছুই শিখছেন না বা কেউ উপকৃত হচ্ছে না। বরং এমন বিষয়ে গসিপ করুন যার মাধ্যমে আপনি ওই ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। টাইম ম্যাগাজিন।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১)