সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান সখিনা। তার স্বামী- পরিত্যাক্তা ২২ বছরের মানসিক ভারসম্যহীন কন্যাকে ধর্ষনের পর কতিপয় প্রভাবশালী তার ইজ্জতের মূল্য ধার্য্য করে দেয় ৮ হাজার টাকা। ধর্ষনের ঘটনাটি থানায় কোন মামলা দেওয়া যাবে না এই শর্তে চাপ প্রয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্থ নারীকে শেকলে বন্দি করে রাখা হয় তার বাবার বাড়িতে। তাছাড়া তার মা সখিনাকে একরকম নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল এতদিন। 

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ধর্ষনের ঘটনাটি জানাজানি হলে তৎপর হয়ে পরে পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মী। অবশেষে চলতি বছরের গত ২৪ সেপ্টেম্বর শক্রবার রাতে ক্ষতিগ্রস্থ ও নারীর মা সখিনা বাদী হয়ে নওপাড়া ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের হানিফ মেম্বার ও তাকে সহায়তার জন্য মাইজকান্দি গ্রামের ললিতা আক্তারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৩০ ধারা মোতাবেক মামলা দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্থ নারীর মা সখিনা খাতুন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশে এস.আই সামেদুল হক জানান, প্রায় ২ বছর আগে বলাইশিমুল ইউনিয়নের ভরাপাড়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর কন্যার বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী গড়াডোবা ইউনিয়নের বান্দনাল গ্রামের বাবুল মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের পর কিছুদিন ঘর সংসার করলে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে ওই নারী। পরবর্তিতে সে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসে। গরিব অসহায় ওই নারীর উপর কূ-দৃষ্টি পরে ইউপি মেম্বার হানিফের। তাকে ললিতা আক্তারের মাধ্যমে ফুসলিয়ে মাইজকান্দি গ্রামে ললিতাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ললিতার সহায়তার হানিফ মেম্বার ওই নারীকে ধর্ষন করে।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় কতিপয় মাতাব্বর শালীসের মাধ্যমে হানিফ মেম্বারের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে সখিনার হাতে দেন। সখিনা তার মেয়ের ধর্ষনের মূল্য ৮ হাজার টাকা নিতে রাজী না হলেও চাপ প্রয়োগের মুখে তাকে ৮ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সখিনা জানান, আমি আমার মেয়ের সর্বনাশের বিচার চাই। এই ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ে পাগলের মত হয়ে পড়েছে। যে কারণে তাকে শেকলে আটকে রাখা হয়েছে। এস.আই সামেদুল শনিবার ঘটনাস্থল থেকেই ঘুরে এসে জানান, ওই নারীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য আগামীকাল রোববার নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হবে। এছাড়া ২২ধারায় জবান বন্দি নেওয়ার জন্য ম্যাজিষ্ট্যাট আদালতে হাজির করা হবে।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১)