সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কর্যক্রম চলমান একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় “৭নং আলীরচর কাপাসাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে” নেই যাতায়াতের রাস্তা। বিদ্যালয়টিতে কোন মাঠ না থাকলেও, বিদ্যালয়ের ১২ শতাংশ ভূমি দখল হয়ে আছে। সীমানা অরক্ষিত থাকায় ১২ শতাংশ ছাড়াও দখলের পথে বিদ্যালয়ের তিন পাশের আরও বেশকিছু জায়গা। ভূমি দখল ছাড়াও শ্রেণি, শিক্ষক সংকটসহ অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টি।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার নেই নির্দিষ্ট কোনো রাস্তা। কাদামাটি পেড়িয়ে ও মানুষের বাড়িঘরের উপর দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। সংকট রয়েছে শ্রেণি কক্ষের, প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৯টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন হলেও, নেই শ্রেণি সমতূল্য শ্রেণিকক্ষ। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, এগারো জন শিক্ষকের পরিবর্তে শিক্ষক রয়েছে সাত জন।

অরক্ষিত রয়েছে পুরো বিদ্যালয়ের সীমানা, ফলে একটু একটু করে দখল হচ্ছে তিন পাশের ভূমি। এছাড়া স্কুলের নামের ১২ শতাংশ ভূমি দখল হয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন নির্মাণ হলেও, উদ্ধারের নেই কোনো তৎপরতা। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো খেলার মাঠ, নেই ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ ব্লক, নেই শিক্ষার্থীদের কোনো কমনরুম, প্রতি শ্রেণি কক্ষেই রয়েছে চেয়ার টেবিল সংকটসহ অসংখ্য সমস্যায় জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি। যেনো বিদ্যালয়টি দেখার কেউ নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা নাহিদা আক্তার রুনা বলেন, বিদ্যালয়টির বর্তমানে প্রধান ও সবচেয়ে জরুরি সমস্যা হলো রাস্তা ও শিক্ষক সংকট। রাস্তা না থাকায় বিভিন্ন মানুষের বাড়ি-ঘরের উপর দিয়ে শিক্ষকদের যাতায়াত করতে হয়। ফলে বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের মানুষের বাড়ি-ঘরের উপর দিয়ে আসতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষক সংকট থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আল মামুন শ্রাবণ বলেন, এটি উপজেলার একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস খোলা রয়েছে। বিদ্যালয়ের কোন রাস্তা নেই বললেই চলে, সীমানা অরক্ষিত, বেদখল জমি, ক্লাস রুম সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, নেই কমন রুম, খেলার মাঠ। শুধু বিদ্যালয়ের দুটি ভবন আর শিক্ষার্থী ছাড়া সবকিছুই সংকট এখানে। এসকল সমস্যা সরকারি ভাবে সমাধান না করলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষাদান ব্যাহত হবে এবং হচ্ছে। আমি ও প্রধান শিক্ষক মহোদয় বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও এগুলোর কোন সমাধান পাচ্ছি না।

এই বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. কবিরুল ইসলাম রাস্তা ও শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তা না থাকায় শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এটি সত্য, কিন্তু রাস্তা নির্মাণতো আমাদের কাজ না, তারপরও বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি এবং শিক্ষক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা আছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ১২ শতাংশ ভূমি দখল মুক্ত করা ও ওয়াশরুম সংকটসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছি।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১)