রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশেষ গণটিাকা কার্যক্রম চলাকালে এক স্বাস্থ্য কর্মীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। বুধবার বিকেল চারটায় সাতক্ষীরা জেলা হেলথ এসিসট্যান্ট শাখা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাতক্ষীরা- আশাশুনি সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রধান জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা হেলথ এসিসট্যান্ট শাখার সভাপতি আলী হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন, সহসভাপতি কমলা রানী মণ্ডল, সদর শাখার সভাপতি মোশাররফ হোসেন, স্বাস্থ্য সহকারি বাবলা সরকার প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, কোন কারণ ছাড়াই স্বাস্থ্য কর্মী মনিরুজ্জামানকে ইয়ারব পিটিয়ে জখম করেছে। ভাঙচুর করেছে আসবাবপত্র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে না পারা তুজুলপুরের হোটেল কর্মী সাংবাদিক হয়ে তিন বার পরীক্ষা দিয়ে করানাকালিন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতাধীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা পরীক্ষায় পাশ করেছে। আজ থেকে ১০ বছর আগে অন্যের সার্টি ফিকেটে ফ্লুইড মেরে মানবজমিনের প্রতিনিধি হয়েছে। বর্তমানে সীমান্তের চোরাঘাট মালিকসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে বিলাসবহুল বাড়ি, তিনটি ট্রাকসহ চার কোটি টাকার মালিক হয়েছে ইয়ারব। পাচারকারিদের পক্ষ নিয়ে তুজুলপুরের আব্দুল আজিজ ও তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে ক্লাবে বেঁধে রেখে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর নেন ইয়ারব।

এ সময় তৎকালিন ঝাউডাঙা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সিল ও সাক্ষর জাল করে সে। মামলা তুলে না নেওয়ায় আজিজ, তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে অন্য নারী দিয়ে মিথ্যা পাচার মামলা করায় ইয়ারব। তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালিন স্কুলের একটি অনিয়ম নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে কানে থাপ্পড় মারে ইয়ারব। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করলে স্কুলের একটি কক্ষের মধ্যে ঢুকে দরজা দিয়ে জীবন বাঁচায় ইয়ারব। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ইয়ারবের বিরুদ্ধে মামলা করায় হুমকি দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করে ইয়ারব। তুজুলপুরের কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার জন্য ইয়ারবকে প্রতিদিন ট্রলি পিছু ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাতক্ষীরার এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ট্রলি চালক আজাহারুলকে দিয়ে চাঁদাবাজির মামলা করিয়ে নিজে সাক্ষী হয় ইয়ারব।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে পাথরঘাটার আজাহারুলের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে। বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আসাদুজ্জামানের দায়েরকৃত ডিজিটাল আইনের মামলায় সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে ধরছে না। ফলে সে আরো বেপরোয়া হয়ে কোন কারণ ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে মঙ্গলবার ঝাউডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টিকাদান কার্যক্রম চলাকালিন তার মেয়ের সাবেক শ্বশুর ও স্বাস্থ্য সহকারি মনিরুজ্জামানকে পিটিয়ে জখম করেছে। বর্তমানে মনিরুজ্জামান সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইয়ারব হোসেনের অত্যাচারে ঝাউডাঙার ব্যবসায়ি সমাজ ও সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, মনিরুজ্জামানের উপর হামলার ঘটনায় মামলার পর পুলিশ ইয়ারবকে গ্রেপ্তার করায় তার সহযোগী অস্ত্রধারী ক্যাডার ভাটপাড়ার আরিফ, তুজুলপুরের ট্রলি চালক জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার রাতে মনিরুজ্জামানের বাড়িতে যেয়ে হুমকি দিয়েছে। এমনকি আদালত থেকে জামিন পেতে তার লোকজন বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করছেন। ইয়ারব দ্রুত জামিনে মুক্তি পেলে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। ইয়ারবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামি শনিবার দুপুর দু'টোয় সাতক্ষীরার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসুচি পালনের পাশাপাশি প্রায়াজনে রবিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, স্বাস্থ্য সহকারি মনিরুজ্জামাানের উপর ভোবে একজন সাংবাদিক হামলা চালিয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাস্থ্য কর্মীদের আন্দোলন সংগ্রামের প্রতি তার নৈতিক সমর্থন রয়েছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১)