মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের করটিয়ার ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের হাট সংলগ্ন সুন্দরী খালটি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা শত বছরের ঐতিহ্য ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুন্দরী খালের হাটের অংশ জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। অবৈধ দখলদারদের কালো থাবায় খালটি প্রায় বিলুপ্ত। যেটুকু রয়েছে- তা ময়লার ভাগাড়।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়ার সুন্দরী খালটি এক সময় স্থানীয় জমিদারদের নৌপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল। সে সময় এ খাল দিয়ে পানসি নৌকাসহ বড় বড় জাহাজও চলাচল করত। নানা দিক দিয়ে অপার সৌন্দর্যের কারণে জমিদাররা খালটি ‘সুন্দরী খাল’ নামে অভিহিত করেন। কালের বিবর্তনে খালটির স্রোতধারা হারিয়ে গেছে। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হবাব পর নৌপথে এই খাল দিয়ে দেশ-বিদেশের লাখো ক্রেতার সমাগম ঘটত করটিয়ার বিখ্যাত শাড়ির হাটে।

স্থানীয়রা জানায়, সরকারি সা’দত কলেজসহ স্থানীয় আরো পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রতিদিন ওই খালের পাশ দিয়ে চলাচল করে। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে পথচারীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্থানীয়রা। ২০১৬ সালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সুন্দরী খালের কিছু অংশ দখলমুক্ত করা হলে আবারও দখলে নেমেছে ওই চক্র। স্থানীয় শ্রমিক সমিতির নামে সুন্দরী খালের উপর নির্মিত লাল ব্রিজের কাছে বাণিজ্যিকভাবে খোলা টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। টয়লেটের মলমূত্র সরাসরি যাচ্ছে খালে।

সরকারি সা’দত কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গুটি কয়েক লোকের কারণে করটিয়ার হাজার বছরের ঐতিহ্য বিলীনের পথে। যে যেভাবে পারছে সুন্দরী খাল দখল করে নিচ্ছে। তাছাড়া এলাকার সব ধরণের বর্জ্য ও মলমূত্র খালে ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে খালের পাশ দিয়ে কেউ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেনা।

করটিয়ার কাপড়ের হাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এক সময় তারা সুন্দরী খালে নৌকা বেধে করটিয়া হাট করতেন। বর্তমানে দখল-দূষণে সুন্দরী খাল মরে গেছে। তারা সুন্দরী খাল রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

স্থানীয় দখলদারদের একজন বিএনপি নেতা মো. ইউসুব আলী জানান, তিনি এককভাবে সুন্দরী খাল দখল করেন নাই, আরও ১৫-১৬ জন ব্যক্তিও দখল করেছেন।

করটিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতি সৈয়দ মাজেদুল আলম নাঈম জানান, সুন্দরী খালটি করটিয়ার অপার সৌন্দর্যের একটি নিদর্শন। এ খালের জায়গা কেউ কেউ জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন- যা এখনই অপসারণ করা প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. খায়রুল ইসলাম জানান, ইতোপূর্বে যারা সুন্দরী খাল দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া কিছুদিন আগে খালের একাংশ জুড়ে এইচএম ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ঘর উত্তোলন করার চেষ্টা করায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী জানান, সুন্দরী খালটি জেলার বাণিজ্যিক রাজধানী করটিয়ার ফুসফুস। জবরদখলমুক্ত করে খালটি প্রবাহমান করা হলে এলাকার মানুষ স্বস্তি পাবে।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১)