বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখার একটি প্রাইভেট নোহা গাড়ী নরসিংদীর পাঁচদোনা এলাকা থেকে দিন দুপুরে ডিবি পরিচয়ে  ছিনতাইয়ের আটদিনেও পুলিশ কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে আসা শারীরীক নির্যাতনের স্বীকার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা গাড়ী চালক আব্দুস শুক্কুর(৩০) মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।

পুলিশ,গাড়ী চালক ও এজাহার সুত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাখিয়ালা গ্রামের ড্রাইভার আব্দুস শুক্কুর গত ৫সেপ্টেম্বর ভোরে প্রাইভেট গাড়ী সাদা নোহা( সিলেট-ট-১১-০৭২৪) নিয়ে ঢাকা থেকে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বড়লেখায় নিয়ে আসার জন্য রওয়ানা দেন। এদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নরসিংদীর পাঁচদোনা নামক স্থানে আব্দুস শুক্কুর নোহা গাড়ী নিয়ে পৌছা মাত্র ডিবি পোশাকে পরিধানে চারজন ও সাদা পোশাকে একজন ব্যক্তি গাড়ী সিগন্যাল দিয়ে থামায়। এসময় গাড়ী কাগজ পত্র পরীক্ষার নাম করে ডিবি পরিচয়রধারী ব্যক্তিরা আব্দুস শুক্কুরকে গাড়ী থেকে নামিয়ে চোখ ও হাত-পা বেঁধে অন্য গাড়ীতে তুলে ফেলে । আব্দুস শুক্কুরের নোহা গাড়ীটি অন্য চালক নিরাপদে নিয়ে যায়। নোহা গাড়ীটির মালিক বড়লেখা পৌর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওবিএনপি নেতা মিছবাহ উদ্দিন মিছবা। দীর্ঘদিন ধরে আব্দুস শুক্কুর ঐ নোহা গাড়ী চালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। ডিবি পরিচয়রধারী ব্যক্তিরা আব্দুস শুক্কুরকে জানায়, সে (শুক্কুর) গাড়ীটি চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে তাদের কাছে সংবাদ রয়েছে। আব্দুস শুক্কুরকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গাড়ীতে তার হাত-পা বেধে অমানুষিক শারীরক নির্যাতন করে। একসময় দুুপর সাড়ে এগারটার দিকে তারা আব্দুস শুক্কুরকে চোখ ও হাত-পা বেঁধে ঢাকা-চট্রগ্রামের বাইপাস গাউসিয়ার নিকটে কুচুরিপানায় ফেলে চলে যায়।

চালক আব্দুস শুক্কুর জানান, সময় যত যাচ্ছে ততই তিনি পানির নীচে দিকে তার সমস্ত শরীর চলে যাচ্ছে। হাত-পা বাধা থাকায় তিনি নিজেই কিছু করতে পারছিলেন না, তবে বাঁচাবার জন্য তিনি চিৎকার করছিলেন। এসময় পাশ দিয়ে যাবার সময় চিৎকার শুনে এক বৃদ্ধ লোক তাকে উদ্ধার করেন। পরে শুক্কুর বিষয়টি গাউসিয়া পুলিশ ফাঁড়িকে বিষয়টি অবহিত করেন। গাউসিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পরামর্শক্রমে আব্দুস শুক্কুর এদিন বিকালে নরসিংদী থানায় সাধারন ডায়েরী করেন । নরসিংদী থানা পুলিশ আব্দুস শুক্কুরকে নিয়ে রাতভর বিভিন্ন স্থানে গাড়ীর সন্ধানে অভিযান চালানো হয়।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গাড়ী চালক আব্দুস শুক্কুর শুক্রবার(১২সেপ্টেম্বর) জানান,‘ডিবি পরিচয়ধারীরা তাকে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরীক ভাবে মানসিক নির্যাতন করেছে এবং হাত-পা বেঁেধ কুচুরিপানায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে। ঐ বৃদ্ধ লোক আমাকে না বাঁচালে হয়তো আমি বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে মাটিতে শায়িত হতাম । কারন তারা আমার গাড়ীর কাগজাদি ড্রাইভিং লাইসেন্স, টাকা সহ মানিব্যাগ নিয়ে গিয়েছিল।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোঃ আমিনুর রহমান জানান, তাকে আনতে গিয়ে গাড়ীটি ছিনতাই হয়েছে এবং ভাগ্যক্রমে আব্দুস শুক্কুর বেঁচে গেছেন। তিনি বিষয়টি নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও পৃুুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

নরসিংদী থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কাশেম শুক্রবার মুঠোফোনে (০১৭১৩-৩৭৩৪১২) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গাড়ীটি উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

(এলএস/এটিআর/সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৪)