আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ ৪ অক্টোবর থেকে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে।

গত বছর এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত কিন্তু এবার তা এগিয়ে আনা হয়েছে। আর নিষিদ্ধ এ সময়ে ইলিশ শিকার, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হলে জরিমানা ও কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। এ সময় সরকারীভাবে জেলেদের জন্য ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে। সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৮ জন জেলে রয়েছে। এরমধ্যে ইলিশ আহরণকারী জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১১৯ জন। আর জাটকা আহরণকারী জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৯ জন। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৩ লাখ ৭ হাজার ১২৪ জেলের অনুকূলে ৬ হাজার ৯৪২ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ’র চাল ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে বরিশাল জেলায় ৫১ হাজার সাতশ’ জেলে পরিবারকে ১ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন, পিরোজপুর জেলায় ১৭ হাজার সাতশ’ জেলে পরিবারকে ৩৭৪ মেট্রিক টন, পটুয়াখালীর ৬৩ হাজার আটশ’ জেলে পরিবারকে এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন, ভোলার এক লাখ ৩২ হাজার জেলে পরিবারের জন্য দুই হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন, বরগুনার ৩৭ হাজার ৭৪ জেলে পরিবারের জন্য ৭৪১ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন এবং ঝালকাঠি জেলায় তিন হাজার ৮৫০ জন জেলে পরিবারের জন্য ৭৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমে কেউ মাছ আহরণে নদীতে নামলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এসব চাল উপজেলা মৎস্য অফিসের তালিকাভুক্ত জেলেদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করবেন। এছাড়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ২ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন এই আট মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর এ ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

অপরদিকে ইলিশ গবেষকরা বলছেন, ইলিশ মূলত সারাবছরই ডিম দেয়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের চারটি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ডিম বেশি পাড়ে। তাই ইলিশের জোগান বাড়াতে এই সময় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এইসময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখতে পারলে মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারবে। এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা জাটকার জন্ম হবে। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

সূত্রমতে, গতবছর ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাকালে বিভাগে এক হাজার ২৬টি মোবাইল কোর্টে ও দুই হাজার ৫০৫টি অভিযানে এক হাজার ২৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়। যেখানে আইন অমান্য করায় এক হাজার ১৩৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও ২০ লাখ ৮২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ০৩, ২০২১)