উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : পান-সুপারির জন্য বিখ্যাত চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলা। অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত হাইমচরে সুপারির এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন ও ভালো দামে খুশি স্থানীয় সুপারির বাগান মালিকরা। করোনার এই ক্রান্তিকালে সুপারির ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে বাগান মালিকদের মুখে। বলা হয়ে থাকে হাইমচরের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি উৎপাদনে উপযোগী।

এ জনপদের বেশির ভাগ বাড়ির পাশের আঙ্গিনায় সুপারির গাছ আছে। এছাড়াও চাষিদের রয়েছে এলাকাজুড়ে সুপারি বাগান। সুপারির বাগান করে উৎপাদন করা হচ্ছে শত-শত কোটি টাকার সুপারি। অর্থকারী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা। উৎপাদিত এ ফসলের বাজার দর ভালো থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, হাইমচরে ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে ৪৫০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে এ বছর উৎপাদিত হয়েছে ৮,৮০০ টন সুপারি। এ মৌসুমে উৎপাদিত সুপারির বাজার মূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সুপারির মৌসুম শুরু কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মূলত কার্তিক মাস আর অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারির ভরা মৌসুম। তবে এবার সময়ের আগে বাজারে এসেছে সুপারি। আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে বাজারে সুপারি আসতে শুরু করে। এতে সুপারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারি ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে উপজেলার প্রতিটি বাজারেই প্রচুর পরিমাণে সুপারি আসে। এখানকার সুপারির প্রায় ৬০ ভাগ নদীনালা, খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ৪০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষি, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হাইমচরে সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকরা সুপারির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

এবার মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই সুপারি বিক্রির প্রধান মোকাম উপজেলা সদর আলগী বাজার, জনতা বাজার, হাইমচর বাজার, চরভৈরবী বাজার, কাটাখালী বাজারসহ স্থানীয় প্রতিটি বাজারে সুপারিকে ঘিরে বর্তমানে চলছে জমজমাট ব্যবসা।

চরভাঙ্গার সুপারি চাষি মোক্তার আহমদ মিজি জানান, সুপারি গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা এবং তদারকির কারণে গাছে রোগ-বালাই কম ও ফলন বেশি হয়েছে। গাছ রোপণ ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে কৃষি বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নে হাইমচরে অর্থকরী ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে বলেও জানান তারা ।

হাইমচর উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদামতো সুপারি স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। এ বছর প্রতি পোন সুপারি (৮০টি) মানভেদে ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ দেবব্রত সরকার জানান, সুপারি হাইমচরের ঐতিহ্য। আর পান-সুপারির জন্য এ জনপদ বিখ্যাত। তাই বলা যায়, সুপারি হাইমচরের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি চাষ, পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কিছুটা বেশি। এতে ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।

(ইউএইচ/এসপি/অক্টোবর ০৫, ২০২১)