তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : ভূয়া প্রত্যয়ন নিয়ে আদালত থেকে আসামী জামিনের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের পর তড়িগড়ি করে তথ্য এড়িয়ে তদন্তের অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে পলাতক আসামীকে ভুয়া প্রত্যয়ন দেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। পরে এ বিষয়টি জাতীয় দৈনিক বাংলা ৭১’ ও দৈনিক আমার হবিগঞ্জ এ সংবাদ প্রকাশ হলে নজরে আসে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) কর্তৃপক্ষের। গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের লাইন ডাইরেক্টর কাজী হেফায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য ঘটনা উপস্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও প্রায় ১ মাস পার হলেও আটকে আছে তদন্ত কার্যক্রম।

সুত্র জানায়, ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করলে চাকরি হারাতে পারেন প্রত্যয়নকারী কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। তাই নিজ প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের বাঁচাতে তথ্য এড়িয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত চলছে’। তবে কার কার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি তথ্য এড়িয়ে যান।

এদিকে, ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করে অভিযুক্ত আব্দুর রশিদ ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

উল্লেখ্য, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাতিরথান গ্রামে চুরি-ছিনতাই ও লুটপাটের ঘটনায় গত ২৬ মার্চ হবিগঞ্জ সদর থানায় (জিআর ৪৮/২১) মামলা দায়ের করেন জনৈক গৃহবধূ। এ মামলার এজাহার ভুক্ত প্রধান আসামী আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকলেও অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে কৌশলে ম্যানেজ করে রাখে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস। পরে গত ১লা এপ্রিল হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে ঘটনার সময় অন্যত্র দায়িত্বরত থাকার ভূয়া প্রত্যয়ন গ্রহণ করেন তিনি। ভূয়া প্রত্যয়ন দিয়ে হবিগঞ্জ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আব্দুর রশিরে আইনজীবি মোহিত চৌধুরী। একজন সরকারী কর্মকর্তার প্রত্যয়নে জামিন অযোগ্য ৩২৬ ধারার চার্জ থাকলেও আব্দুর রশিদকে জামিন দেন আদালত। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর দেয়া প্রত্যয়ন পত্রে ফাইল স্বারক নাম্বার এবং কোন অফিস কপি সংরক্ষিত না থাকায় বিষয়টি সন্দেহের সৃষ্টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার। পরে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এবং ছবি-ভিডিও এবং প্রত্যয়ণ পত্রের যাতবীয় বিষয় পর্যালোচনা করে মামলার চার্জশীটে অন্তূক্ত হয় আব্দুর রশিদ। শুধু এ মামলাই নয়, ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে সরকারী ঔষধ বাহিরে বিক্রি, ক্লিনিকে আসা সেবা প্রত্যাশীদের সাথে অসাধু আচরণের অভিযোগও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জিআর ৪৮/২১ এবং মিস ৪২০/২১ দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

(টিএইচ/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০২১)