আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাকের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে এগিয়ে আছে শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা মোক্তাদা আল-সদরের দল। ‘সদরিস্ট মুভমেন্ট’র এক মুখপাত্র এখন পর্যন্ত ৭৩টি আসন জয়ের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া আরও অনেক আসনে এগিয়ে থাকার কথা বলেছেন তিনি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে স্থানীয় সময় রোববার (১০ অক্টোবর) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ভোটে ৩২৯টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৬৭টি দলের তিন হাজার ২০০ এর বেশি প্রার্থী লড়েছেন।

রাজধানী বাগদাদসহ কয়েকটি প্রদেশের ভোট গণনা থেকে পাওয়া তথ্য এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রাথমিক ফলাফল থেকে জানা যায়, পার্লামেন্টের ৩২৯টি আসনের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন ‘সদরিস্ট মুভমেন্ট’র প্রার্থীরা। স্থানীয় গণমাধ্যমও একই তথ্য দিচ্ছে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে সরাসরি এক বক্তব্যে মোক্তাদা আল সদর বলেছেন, বিদেশি শক্তি মুক্ত দেশ করার অঙ্গীকার করছেন তিনি। আল সদর বলেন, ‘আমরা (বিদেশি) দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাবো, তারা যেন ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলান।’ এসময় বিজয় মিছিলে অস্ত্র ছাড়াই অংশ নিয়ে আনন্দ উদযাপনের জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রভাবশালী এই রাজনীতিক।

প্রাথমিক ফলাফলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের গণবিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া কিছু প্রার্থীও নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। তবে ওই গণবিক্ষোভের সময় প্রায় ৬০০ জনকে হত্যার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ইরান-সমর্থিত দলগুলো আগের চেয়ে কম আসন পেয়েছে।

রোববারের ভোটে এখন পর্যন্ত কুর্দি দলগুলো ৬১ আসনে জয় পেয়েছে। এর মধ্যে ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলের সরকারে প্রাধান্য বিস্তার করা কুর্দিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পেয়েছে ৩২টি আসন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তান পার্টি জয় পেয়েছে ১৫টি আসনে।

ইরাকের পার্লামেন্টের সুন্নি স্পিকার মোহাম্মদ আল-হালবৌউসির তাকাদ্দুম জোট জয় পেয়েছে ৩৮টি আসনে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির নেতৃত্বাধীন ‘স্টেট অব ল’ জোট ৩৭টি আসনে জিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে সুন্নি মুসলিম প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সরকার উৎখাত করার মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া ও কুর্দিদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয়। সেসময় থেকে শিয়ারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটিতে।

২০১৯ সালে সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পর নতুন একটি আইনের আওতায় নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ইরাকে। দেশটির সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা অনেক কমে গেছে। তাই এ আগাম নির্বাচন দেওয়া হয়েছে তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য, যারা রাষ্ট্রীয় অর্থে নিজেরা ধনী হয়েছেন।

ইরাকি কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের ভোটের ফলাফল ইরাক বা মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন না তারা। রয়টার্স, আল জাজিরা।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১২, ২০২১)