রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কর্মচারির সহায়তায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ড্রয়ারে থাকা চেক হাতিয়ে নিয়ে হাতের লেখা, সাক্ষর ও সিল জালিয়াতি করার অভিযোগে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের অটো পয়েন্টের মালিক ইটাগাছার সুব্রত বিশ্বাসের দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে এ আদেশ দেন।

আসামীরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে ও শহরের মুনজিতপুরের সাবেক সেনা সদস্য জয়নাল আবেদীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া সদর ইউআরসি’র সহকাাির ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলী, খুলনার লবনচোর থানাধীন আব্দুর রশীদ মোল্লার ছেলে জিয়ারুল হক ওপুরাতন সাতক্ষীরার শফিকুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম।

মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, শহরের কামাননগরের আমিনুর রহমান বকুলের মাধ্যমে ইটাগাছার বৈদ্যনাথ বিশ্বাসের ছেলে পলাশপোলের অটো পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী সুব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় ঘটে সদর ইউআরসি ও আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে ইয়াছিন আলীর। বর্তমানে পেশাগত কারণে শহরের মুনজিতপুরের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জয়নাল আবেদিনের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেন তিনি। বাড়ি বিক্রি নিয়ে ইয়াছিন আলীর সঙ্গে অটো পয়েন্টের মালিক সুব্রত বিশ্বাসের বিরোধ চলে আসছিল। এ কারণে ইয়াছিন আলী অটো পয়েন্টের ম্যানজার শরিফুল ইসলাম চয়নকে ম্যানেজ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ড্রয়ারে থাকা সুব্রত বিশ্বাসের সাতক্ষীরা সদরের পূবালী ব্যাংকের শাখার চলতি হিসাব ১৯২৩ এর সিএস১০০-এ-০৬৮৩২৫৩ নং চেক ২০১৯ সালের মার্চ মাসের আগে বা পরে চুরি করিয়া লইয়া যান।

শরিফুল ইসলাম চয়ন ও ইয়াছিন আলী যোগসাজস করে জিয়ারুল হককে দিয়ে খুলনা মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ৫০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা (সিআর-৫৮৪/১৯)করান। চেক এর তারিখ, বাংলায় লেখা টাকার পরিমান ও সুব্রত বিশ্বাসের সাক্ষর জাল করা হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় সুব্রত বিশ্বাস সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে গত বছরের ৯ মার্চ ইয়াছিন আলী, জিয়ারুল হক ও শরিফুল ইসলাম চয়নের নামে জালিয়াতির মামলা (সিআর-২৩০/২০) করেন সুব্রত বিশ্বাস। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক পারুল খাতুন চেক চুরি ও জালিয়াতির অভিযোগ সত্য বলে গত ১১ এপ্রিল আদালতে প্রতিদেন দাখিল করেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধার্য দিনে পারুল খাতুনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের নীচের লাইনে সাদা কালি দিয়ে ঘসা মাজা করা হয়েছে এমন দেখে আগামি ১৭ অক্টোবর ধার্য দিনের মধ্যে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে নতুন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক। সে অনুযায়ি প্রতিবেদন পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর রবিবার ইয়াছিন আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দেন।

একই ভাবে চেক চুরি ও প্রতারনার অভিযোগে কর্মচারি শরিফুল ইসলাম চয়ন, কামাননগরের আমিনুল ইসলাম বকুল ও সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে সুব্রত বিশ্বাসের দায়েরকৃত সিআর-৬৩৭/২০ নং প্রতারণার মামলার গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর পুলিশ প্রতিবেদন পেয়ে গত ২৫ ফেব্র“য়ারি সমন জারির নির্দেশ দেন আদালত। গত ১২ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে আবেদন জানালে বিচারক মোঃ হুমায়ুন কবীর ইয়াছিন ও আমিনুল ইসলাম বকুলের জামিন মঞ্জুর করেন।

বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল খালেক জালিয়াতির মামলায় ইয়াছিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সমন জারিও প্রতারণার মামলায় ইয়াছিনসহ দু’জনের জামিন লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১৭, ২০২১)