আহমেদ ইসমাম, ঠাকুরগাঁও : তেমন বড় কোন শিল্প কল কারখানা গড়ে না উঠায় দেশের উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলাগুলি এখনও অনুন্যত রয়ে গেছে। অনুন্যত এ জেলা গুলির তালিকায় ঠাকুরগাঁও অন্যতম। তবে শিল্প ক্ষেত্রে উন্নত জেলাগুলির তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এগিয়েছে অনেক বেশি। যার প্রমান মেলে ঠাকুরগাঁও সহ আশেপাশের আরো কয়েকটি জেলার চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগীদের দেখে।

১৯৮৭ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল । ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে এটি ১৮ শয্যার শিশু শয্যা সহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। আর ২০২০ সালের মার্চে ১০০ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নতুন ১৫০ শয্যার সাত তলা ভবন উদ্বোধন করে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এবং ১৮ শয্যার শিশু ওযার্ডটিকে উন্নিত করা হয় ৪৫ শয্যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছে ১৮০/২০০ জন শিশু রোগী। দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা এমন আবহাওয়ায় বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকটে পড়ে অভিভাবকরা অধিকাংশ শিশু রোগীদের নিয়ে অবস্থান করছে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দা কিংবা মেঝেতে। ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রোগীর স্বজনরা ছুটছেন সেবা নিতে। জেলার পাঁচ উপজেলাসহ আশপাশের জেলা পঞ্চগড় ,নিলফামারি ও দিনাজপুরের কিছু অংশের রোগীরা সেবা নিতে আসায় এ পরিস্থিতি। ফলে কাঙ্খিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

পঞ্চগড়, নিলফামারী ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে সন্তানের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শিশুর অভিভাবকরা জানান রংপুর বা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তুলনায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল কাছে হওয়ায় আমাদের এখানে ছুটে আসা। চিকিৎসার মান ভালো হওয়ায় শয্যা সংকটে পরেও মেঝে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে আমাদের। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালে পাঁ ফেলানোর জায়গা নেই। হাসপাতালটিতে শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি লোকবল বাড়ানোও জরুরি হয়ে পরেছে। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে সেবা নিতে আসা রোগীরা।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহজাহান নেওয়াজ রোগীর চাপের কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নতি হলেও জনবল দেয়া হয়নি। ফলে অতিরিক্ত চাপে পরে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। সেবার মান বাড়াতে হলে জনবল প্রয়োজন। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের বাইরে কম বের হতে দিতে হবে। শরীর ঘেমে গেলে পরনের কাপড় পরিবর্তন করে দিতে হবে। সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও রোগমুক্ত থাকবে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ত্বত্তাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান জুয়েল জানান, শীতের শুরুতে এবং গরমের শুরুতে এ দুই সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে আমাদের এখানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়ে এখানে আসছেন। এ কারণে এই হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থেকেই যায়। আমাদের এখানে প্রতিদিনই অভিজ্ঞ শিশু ডাক্তার রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন এবং শিশু ওয়ার্ডে প্রতি শিফ্টে ৩ জন করে নার্স প্রতিনিয়ত অসুস্থ্য শিশুতেদর সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত রোগীদের গাদাগাদি করেই চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে আমাদের।

(আই/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০২১)