স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে স্কটল্যান্ডের কাছে পরাজয়। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েভলে খেলা নিয়েই কিছুট সংশয় তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে কাংখিথ সুপার টুয়েলভে খেলার পথ পরিষ্কার করলো টিম বাংলাদেশ। যদিও তাদেরকে হতে হলো গ্রুপ রানারআপ এবং সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ দলকে খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

প্রথম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপে নবাগত পাপুয়া নিউগিনিকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮১ রানের বিশাল স্কোর গড়ার পর পাপুয়া নিউগিনিকে তারা অলআউট করে দিয়েছে ৯৭ রানের মধ্যে। যার ফলে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় (৮৪ রানের) নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়ে যেখানে আনন্দিত হওয়ার কথা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহসহ দলের অন্য ক্রিকেটাররা, সেখানে তারা ব্যথিত। বিষদে ভরা তাদের হৃদয়-অন্তর। যেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে মাহমদুউল্লাহ রিয়াদদের। ম্যাচ শেষে ওমানের ক্রিকেট একাডেমি গ্রাউন্ডের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসে রিয়াদ যেভাবে মিডিয়ার সামনে কথা বলেছেন, তাতেই তাদের হৃদয়ের সেই রক্তক্ষরণটা টের পাওয়া গেছে।

কেন? এমনটা হওয়ার কারণ কী? মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সে বিষয়টাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর যেভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাতে ব্যথিত হওয়ারই কথা ক্রিকেটারদের। সমালোচনা হোক- এটা মেনে নিচ্ছেন ক্রিকেটাররা। এমন একটি হারের পর সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু সেই সমালোচনা যখন ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে পড়ে যায়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয় এবং ক্রিকেটারদের ছোট করা হয়, তখনই সেটা খারাপ লাগার বিষয়ে পরিণত হয়। এমনকি স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সরাসরি তিন সিনিয়র সাকিব, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক রেট নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন। এ বিষয়টাই মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেটাররা।

সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষাদমাখা মুখ নিয়ে কেন বসেছেন, কেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুবই কাঠখোট্টাভাবে দিচ্ছেন, কেন এমন শক্ত দেখাচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করার পরই যেন আচমকা মুখটা খুলে গেলো রিয়াদের। হৃদয়ের আকুতি যতটা পারা যায় বলে গেলেন।

রিয়াদ বলেন, ‘আজকে ভালো খেলছি বলে সবার কাছে মনে হবে ভালো। আবার এক ম্যাচে খারাপ করলে খুব বেশি করে সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে। অনেক প্রশ্ন এসেছে। আমাদের ব্যাটিংয়ের স্ট্রাইক রেট প্রসঙ্গে। আমাদের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট নিয়ে। আমরা তো চেষ্টা করেছি। চেষ্টার বাইরে তো আমাদের কাছে কিছু নেই। এরকম না যে আমরা চেষ্টা করিনি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু ফল আমাদের পক্ষে আনতে পারিনি।’

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিনে যা হলো..., ঠিক আছে, আমরা মানুষ, আমরা ভুল করি। এ কারণে একেবারে ছোট করে ফেলা ঠিক নয়। এটা আমাদের দেশ। আমরা যখন খেলি, পুরো দেশ একসঙ্গে খেলি। এটা মাথায় থাকে সবসময়। আমাদের চেয়ে অনুভূতি কারও বেশি নয় বলে মনে করি। সমালোচনা অবশ্যই হবে, খারাপ খেলেছি। তবে একেবারেই ছোট করে ফেলা ঠিক নয়। আমাদের সবার কাছেই খারাপ লেগেছে।'

বাংলাদেশ হেরে গেলে ক্রিকেট ভক্ত সমর্থকদের কষ্ট হয়। তারা মেনে নিতে পারেন না। তাই সমালোচনা করেন। যে কারণে সমালোচকদের সংযত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমরাও মানুষ। আমাদেরও অনুভূতি কাজ করে। আমাদের পরিবার আছে। আমাদের বাবা-মায়েরাও বসে থাকে টিভির সামনে। বাচ্চারাও বসে থাকে। তারাও মন খারাপ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো এখন মানুষের হাতের নাগালে। সবার মোবাইলে আছে। সমালোচনা তো হবেই। আমরাও আশা করি, সমালোচনা হোক। খারাপ খেলেছি, অবশ্যই সমালোচনা হবে। কেন হবে না? কিন্তু সমালোচনার মাধ্যমে যদি কেউ কাউকে ছোট করে ফেলে, তখন সেটা খারাপ লাগে।’

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০২১)