রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার দু’জন উপসহকারি পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে  নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মানববন্ধন করা হয়েছে। ডাকাতি, অপহরণ, বনদস্যুতা ও নারী নির্যাতনসহ এক ডজনের বেশি মামলার আসামী পুলিশর সোর্স কাপষণ্ডা গ্রামের রায়হানউদ্দিন খোকার নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুর দুটোর দিকে কাপষণ্ডা ফুটবল মাঠের পাশে এ কর্মসুচি পালন করা হয়।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন ডাকাতি, অপহরণ ও নারী নির্যাতনসহ কমপক্ষে এক ডজন মামলার আসামী খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক রায়হানউদ্দিন খোকা, ছাত্রলীগ নেতা লাকী বিল্লাহ আব্দুর রউফ মোড়ল, সবুজ মোড়ল প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আশাশুনি থানার সহকারি উপপরিদর্শক লিটন ও মিলন দীর্ঘদিন ধরে কাপষণ্ডা, চেউটিয়া, পারশেমারী ও বাইনতলা গ্রামে তুচ্ছ ঘটনায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসার সময় মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুলাই মাসে কাপষণ্ডা গ্রামের স্কুল শিক্ষক শেখর মণ্ডল, দীলিপ বাছাড়, মহারাজ বাছাড়সহ কয়েকজন কালীমন্দিরের বারান্দায় বসে সময় কাটানোর জন্য কলব্রীজ খেলছিলেন। এ সময় উপসহকারি পরিদর্শক লিটন,মিলন ও একজন সিপাহী এসে তাদের হাতকড়া পরিয়ে পেন্ডিং মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৭৫ হাজার টাকা নেন।

সম্প্রতি চেউটিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ ও বারি সানা কাপষণ্ডা বাজারের একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চে লুডু খেলছিলেন। তাদেরকে বিচারাধীন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয় দেখিয়ে থানায় আনার পথে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় উপসহকারি পরিদর্শক লিটন ও মিলন। বাইনতলার আলিম ও আমিনুর রহমান বিড়ি খাওয়ার সময় তাদেরকে আটক করে হাতকড়া পরান ওই দু’ পুলিশ কর্মকর্তা। মাদক মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ২০ হাজার টাকা। গত ২৩ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে কাপষণ্ডা পূর্ব বিলে মন্টু সাহেবের ঘেরের রাস্তায় জুয়া খেলার সময় ওই দু’ পুলিশ কর্মকর্তা মোরশেদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে।

খাজরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি লাকী বিল্লাহ জানতে চাইলে পুলিশ তাকেও হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসতে চাইলে ইউপি সদস্য বাকী বিল্লাহ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক রায়হানউদ্দিন খোকা প্রতিবাদ করলে খোকাকে চড় থাপ্পড় মেরে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ। ছাত্রলীগ নেতা লাকী বিল্লাহকে থানা থেকে ছেড়ে দেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে মোর্শেদকে মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ওই দুই উপসহকারি পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ঠুনকো অভিযোগে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়। ওই দু’ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ২৪ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান বক্তারা।

তবে মঙ্গলবার রাতে রায়হানউদ্দিন খোকা সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করায় সন্ধ্যার পর থেকে তার বাড়িসহ মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারিদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে।

এদিকে কাপষণ্ডা ও চেউটিয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি বলেন, রায়হানউদ্দিন খোকার নামে কয়রা থানায় ডাকাতি দেবহাটা থানায় নারী নির্যাতন, আশাশুনি থানায় চাঁদাবাজি ও সদর থানায় অপহরণসহ কমপক্ষে একডজনের বেশি মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সে নিজেকে পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা রেখে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে নিরীহ মানুষের নামে মামলা দেওয়া, মামলার ভয় দেখিয়ে পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। গত ২৩ অক্টোবর রাতে মন্টু সাহেবের ঘেরের ভেড়িতে রায়হানউদ্দিন খোকা, ছাত্রলীগ নেতা লাকী বিল্লাহ ও মোরশেদকে জুয়ার বোর্ড থেকে আটক করলে খোকা পুলিশকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। এখান সেই খোকাই পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে এটা ভাবতে কষ্ট হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার উপসহকারি পুলিশ পরিদর্শক লিটন ও মিলন সাংবাদিকদের বলেন, রায়হানউদ্দিন খোকার বিরুদ্ধে এলাকায় বনদস্যুতা, অনিয়ম ও দূণীতির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা ও খুলনা জেলার একাধিক থানায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে এমন খবর জানতে পেরে প্রতিশোধ নিতে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২১)