শিতাংশু গুহ


বিদেশমন্ত্রী ড: আবদুল মোমেন অবলীলাক্রমে বলে দিয়েছেন, সংখ্যালঘু হত্যা, ধর্ষণের মনগড়া গল্প ছড়ানো হচ্ছে? কি চমৎকার কথা, একমাত্র বাংলাদেশের মন্ত্রীরাই এমন সুন্দর গল্প বলতে পারেন। আইনমন্ত্রীও একই সাফাই গেয়েছেন? প্রশ্ন হলো, অস্বীকার করে কি শেষরক্ষা হবে? অস্বীকার করে কি দুষ্কৃতিকারীদের উস্কে দেয়া হচ্ছেনা? পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কোন মন্দিরে আক্রমন হয়নি, কেউ ধর্ষিতা হননি? ৪জন মুসলমান নিহত হয়েছে, ২জন হিন্দু এমনিতেই মরে গেছে। সচারচর মিডিয়া উত্তেজনা প্রশমনে নিহতের ধর্ম প্রকাশ করেনা, বিজ্ঞ বিদেশমন্ত্রী ৬জন মারা গেছে বললেও চলতো! পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিটি মোফা (মিনিস্ট্রি অফ ফরেন এফেয়ার্স)-এ আছে, অর্থাৎ এটি সরকারি বক্তব্য। মিডিয়ায় তিনি একই বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় হিন্দুদের এক সমাবেশে তাকে মিথ্যাবাদী দেখিয়ে বহু প্ল্যাকার্ড শোভা পায়, এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করা হয়। একইদিন টাইম্স স্কয়ারে হিন্দুদের ওপর একটি সমাবেশে এনিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা হয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্বীকার করেননি, তিনি গণভবনে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠক থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পূজামণ্ডপে আক্রমন পূর্ব-পরিকল্পিত। তিনি বলেন, এবার দুর্গাপূজা চলাকালে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরে কিছু উগ্র মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর ভাংচুর করেছে। সেখানে পরিস্তিতি মোকাবেলায় পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। চারজন নিহত হয়েছেন, চিকিসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর ফেইসবুকে “বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিক্ষত বাংলাদেশ” শিরোনামে এক ষ্ট্যাটাসে লিখেছেন, ২০২১ সালের ১৩ই অক্টবর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক সহিংসতা ঘটানোর ষড়যন্ত্র হয় কুমিল্লায়। সেদিন কুমিল্লার প্রায় ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা করে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা।

এ প্রেক্ষিতে একজন হৈমন্তী সরকার একটি হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আমার বৃদ্ধ পিতার করজোড়ে চোখের জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা একটু দেখবেন’...। হৈমন্তী বলেছেন, তাঁর বাবা একজন এমবিবিএস ডাক্তার, সারাজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন। বিনিময়ে যা পেয়েছেন তা হলো, তাঁর ভাষায়: দুর্গাপূজার নবমীর দিন ২০/২৫টি কিশোর-যুবা আমাদের বসতবাড়ীর পূজামণ্ডপে এসে বললো, বাংলাদেশে থাকতে হলে হিন্দুরা পূজা করতে পারবে না, এত ঢাক বাজাবাজি কিসের? ঢাক বাজানো বন্ধ, নইলে পেটানো হবে? হৈমন্তী লিখেছেন, সেখানে আমি ছিলাম, ভয় পাইনি, শুধুই বিস্ময়, অবাক বিস্ময়! তিনি লিখেছেন, যে বাড়ীর দরজা সর্বদা সবার জন্যে খোলা, সেই খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে একদল লোক আমাদের যাইচ্ছে তাই ধামকি দিয়ে গেলো, আমার বাবা চোখে জল নিয়ে শুধু দেবতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো। মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন শাঁখা-সিঁদুর হারানো আরো এক অসহায় নারী। তিনি সেলিব্রেটি হতে আসেননি, এসেছেন তার স্বামী হত্যার বিচার চাইতে, তাঁর ছোট্ট কন্যার পক্ষে বাবা হত্যার বিচার চাইতে, বলেছেন, সুযোগ থাকলে যেন মন্ত্রী চৌমুহনী ঘুরে আসেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী ।