কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার হাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ছয় শিক্ষার্থী এখনও সুস্থ্য হয়নি। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের লেখাপড়া। কলাপাড়া ও বরিশাল মেডিকেলে দীর্ঘ চিকিৎসায় তারা সুস্থ্য না হওয়ায় এখন চলছে ঝাড় ফুঁক চিকিৎসা। তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মাজারে। রোগ সারাতে এখন তাদের উপর জ্বীন-ভুত তাড়ানোর তাবিজ ও ফকিরের ফিকির দেয়া হচ্ছে। সোমবার সকালে অসুস্থ নিশি আক্তারকে তার পিতা মির্জাগঞ্জ এক পীরের মাজারে নিয়ে পুকুরে গোসল করিয়ে এনেছেন সুস্থতার আশায়। রবিবারও অপর অসুস্থদের এক পীরের মাজারে নেয়ার জন্য কলাপাড়া আনা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ১৯ আগষ্ট স্কুল চলাকালীন হাজীপুর গ্রামের লাবনী বৈদ্য,নিশি আক্তার, সোহেল, জান্নাতী ও ষষ্ঠ শ্রেণীর সুমি, রোজিনা বেগম অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তাদেরকে পরদিন কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি ঘটলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তাররা তাদের এ অসুস্থতার কারণ বের করতে পারেননি। প্রাথমিক ভাবে হিষ্ট্রেরিয়া রোগের চিকিৎসা দেয়া হলেও এখনও তারা অসুস্থ।

অসুস্থ দশম শ্রেণীর ছাত্রী নিশির পিতা নজরুল শেখ জানান, সোমবার সকালে এক ফকিরের কথামতো তার মেয়েকে মির্জাগঞ্জ ইয়ারউদ্দিন খলিফার মাজারের পুকুরে গোসল করিয়ে এনেছেন। এখন একটি ছাগল জবাই করে ফকিরদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। লাবনীর পিতা হৈবাল বৈদ্ধ জানান, তার মেয়ে এই ভালো এই অসুস্থ্য। তাদের নাকি জ্বীনে ধরেছে এ কথা জানায় এক ফকির। এজন্য একটি ছাগল জবাই দিতে হবে। একই অবস্থা অন্যদের।

এদিকে একই স্কুলের ছয় শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও তাদের জ্বীনে ধরেছে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে। অসুস্থদের শ্বাস কষ্ট, শরীর খিচুনি যারাই দেখেছেন তারাই আৎকে উঠছেন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের শার্ষ কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রীদের আশ্বাস দিলেও এখনও আতংক কাটেনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন জানান, ওই অসুস্থ্য ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তারা এখন দূর্ভোগে পড়েছেন। তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জ্বীন-ভুতে ধরেছে এজন্য বিদ্যালয়ের একটি আমড়া গাছ তুলে তার মধ্যে একটি ছাগল পুততে হবে। আরও ছয়টি ছাগল বিলিয়ে দিতে হবে। আর তাদের অসুস্থ্যতার কারনে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপসিস্থিতিও কমে গেছে। ডাক্তার রোগ ধরতে পারেনি এ কারনে এখর ওজা ও ফকিরের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অসুস্থদের।

কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, অসুস্থ্য ছাত্র-ছাত্রীদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন। তাদের এখনই চিকিৎসা করানো না হলে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর ফকিরের কাছে গেলে কি রোগ সাড়ে। এতে আরও তাদের ক্ষতি হতে পারে।

(এমকেআর/এএস/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪)