রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মাছ চুরির অভিযোগ এনে এক ভূমিহীনকে আটক  রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিবাদ করায় ওই নির্যাতিতের ভগ্নিপতিকে ঘর থেকে বের করে এনে এলোপডাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বরিবার সকাল ৯টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত ভূমিহীনকে উদ্ধার করা না গেলেও মারাত্বক জখম ভগ্নিপতিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আড়–য়াখালি গ্রামের আব্দুল গফুর গাজীর ছেলে মোখলেছুর রহমান (৪২) জানান, তার শ্বশুর দেবহাটা উপজেলার চালতেতলা গ্রামের আরশাদ আলী সরদার দীর্ঘ এক মাস সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ৭ নভেম্বর বাড়ি ফিরে যান। ঢাকা থেকে ফিরে তিনি শনিবার শ্বশুরকে দেখতে যান। খলিষাখালিতে বসবাসরত তার শ্যালক রবিউল্লাহকে পার্শ্ববর্তী আসাদুলের মাছের ঘের থেকে শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ ও মাছ চুরির অভিযোগ এনে রবিবার সকাল ৯টার দিকে মারপিট করে ভূমিহীন নেতা আবুল হোসেনের ভাগ্নে আনারুল ইসলাম, আসাদুল, লুৎফর, মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন। হামলাকারিদের হাত থেকে পালিয়ে বাড়িতে এলে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় ওই সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার (মোখলেছুর) তার মাথায় ও পায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সকাল ১০টার দিকে রবিউল্লাহকে এক ভূমিহীন নেতার ঘরের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়। মামলা থেকে বাঁচতে রবিউল্লাহকে আটক রেখে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। ফলে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা থানায় মামলা দিতে সাহস পাননি।
তবে মোখলেছুরের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, তারা কোন আপোষ করবেন না।

খলিষখালি গ্রামের সামছুর রহমান, মনিরুল ইসলাম ও জবেদ আলী জানান, গত ১১,সেপ্টেম্বর ভূমিহীনরা খলিষাখালির এক হাজার বিঘা জমি দখলে নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে। গত ৪ অক্টোবর আশাশুনি থানার দু’ পুলিশ সদস্য খলিষাখালির বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে সাদা পোশাকে যাওয়ার সময় চরপাটার রবিউল ও খালের গোড়ার সাইফুলসহ কয়েকজন তাদেরকে গতিরোধ করে মারপিট করে। আহত পুলিশ সদস্যরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। ওই ডায়েরী থানা থেকে মুছে ফেলতে গত পহেলা নভেম্বর আশাশুনি থানার এক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাতে এক লাখ টাকা দিয়েছেন বলে ভূমিহীন নেতাদের জানান খলিষাখালি মুজিবনগর আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আনারুল ইসলাম।

এ নিয়ে রবিউল্লাহ’র সঙ্গে আনারুলদের বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে মাছ চুরির অভিযোগ এনে আবুল হোসেনের ভাগ্নে সভাপতি আনারুল, আসাদুল, লুৎফরসহ কয়েকজন রবিউল্লাহকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে ঘরের মধ্যে আটক করে রাখেছে। প্রতিবাদ করায় রবিউল্লাহ এর ভগ্নিপতি মোখলেছুর রহমানকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। মামলা থেকে বাঁচতে রবিউল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে রেখে নিজেদের ঘরে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করেছে ভূমিহীন নেতারা। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মোখলেছুরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেয় আসাদুল ও লুৎফর। ভূমিহীন নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মোখলেছুরকে মেডিকেল কলেজ থেকে ফিরিয়ে না আনলে রাতে রবিউল্লার ভাগ্যে কি ঘটতে পারে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার।

এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আলমগীর হোসেন জানান, মোখলেছুর রহমানের মাথায় ও বাম পায়ের পায়ের পাতার উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতে গভীর ক্ষত হওয়ায় যথাক্রমে চারটি ও ছয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। এ ছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে তার কাছে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০২১)