নাটিকা: করোনা






 

ধারা বর্ণনা : সময়কাল ২০১৯ সালের শুরু, স্থান করোনা ভাইরাসের সভাকক্ষ। সার্স ভাইরাস জনিত মহামারির পরে অনেকদিন পার হয়ে গেছে। মানুষ করোনা সংক্রান্ত রোগ বালাইয়ের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে। করোনা গং ভীষণভাবে বিমর্ষ, কেমন একটা boring সময় যাচ্ছে – কিছুই ভাল লাগছে না। স্বয়ং করোনা তার সাঙ্গপাঙ্গের দু:খ বুঝে কিছু করার জন্য ছটফট করছে।

দৃশ্য ১

করোনা: কি খবর করোনা গং। সবাই কেমন ঝিমিয়ে গেছ বলে মনে হচ্ছে।
আলফা: এমন নিরামিষ জীবন আর ভাল লাগছে না।
বেটা: একদম ঠিক কথা।
গামা: কিছু একটা করা দরকার।
করোনা: আমিও তো তাই বলি, কিছু করা দরকার।
ডেলটা: মানুষ খুব বুদ্ধিমান…
আলফা: হ্যাঁ, আমরা ওদের সাথে ভাল পেরে উঠছি না।
ল্যামবডা: কতদিন হয়ে গেল আমরা নিউজে নাই।
করোনা: হুম্ … মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, চল দেখি কি করা যায়। (সবাই বেরিয়ে যায়)

দৃশ্য ২

(গাছ, পশু, পাখি, মাছের সমাবেশ।)
গাছ:আজ আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করব। তোমরা জানো, মানুষের বাড়াবাড়িতে আজ আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। ওরা বনের পর বন কেটে ফেলছে।
বাঘ: ঠিক বলছো।
হরিণ: আমাদের থাকার কোন ভাল জায়গা নেই।
পাখি: বায়ু দূষণে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে।
মাছ: জেলেদের জন্য আমরাতো ঠিকমত বড়ই হতে পারি না।
বাদর: আমাদের খাবারের বড় অভাব।
গাছ: এরকম চললে আমরা শেষ হয়ে যাব। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে মানুষও শেষ হয়ে যাবে।
ব্যাঙ: একদম ঠিক, একদম ঠিক।
প্রজাপতি: কিন্তু কি করব আমরা?
(করোনা গং এর প্রবেশ।)
বাদর: ওরে বাবা ..
ব্যাঙ ও প্রজাপতি: কি হলো?
বাদর: ওই যে … (করোনাদের দেখিয়ে)
করোনা: আরে ভয় পেয়ো না, আমরা তোমাদের কোন ক্ষতি করব না।
আলফা: আমরা তোমাদের সাহায্য করতে চাই।
হরিণ, পাখি ও মাছ: সত্যি বলছ?
গামা ও ল্যামবডা: হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
করোনা: আমরা মানুষকে এমন ভয় দেখাব যেন ওরা কিছুদিন ঘর থেকে বের না হয় ।
বেটা: ওরা বাইরে না গেলে বায়ু, পানি, মাটি দূষণ কমে যাবে।
ডেলটা: তোমরা শান্তি পাবে।
আলফা: তোমরা যার যার বাড়ি চলে যাও আর আমাদের খেলা দেখ।
গাছ: ঠিক আছে, দেখি তোমরা কি করতে পার। এই তোমরা সবাই চল। (গাছ, পশু, পাখি, মাছ বেরিয়ে যায়।)
করোনা: আমাদের আরও শক্তিশালি হতে হবে।
আলফা: দ্রুত একজন মানুষ থেকে অন্য জনের দেহে পৌঁছতে হবে কৌশলে।
ল্যামবডা: ঠিক তাই ..
করোনা: আপাতত যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়। কাছেই যে মানুষটি আছে সেখান থেকেই শুরু করো।

দৃশ্য ৩

(গাছ, পশু, পাখি, মাছ সবাই আনন্দে নাচছে “আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে” গানের সাথে। ভিডিও কলে করোনা গং দেখছে। কিছুক্ষণ দেখে রিমোট দিয়ে বন্ধ)
করোনা: বাহ্ বাহ্ কি আনন্দে আছে ওরা। চারিদিকে কোন মানুষ নেই। সবাই ঘরে বসে আছে। কেউ ওদের বিরক্ত করছে না।
আলফা: আমরা তোমার কথা মত কোন মানুষ প্লেনে ওঠার ঠিক আগে তার শরীরে ঢুকে যাই।
বেটা: আর এভাবে আমরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছি।
করোনা: খুব ভাল, আমি তোদের কাজে খুব খুশী।
গামা: কিন্তু আমিতো কিছুই করতে পারছি না।
করোনা: মন খারাপ করিস না গামা। তোকে আরও শক্তিশালী করে উত্তর আমেরিকাতে পাঠাব।
ডেলটা: আমার কাজ কি?
করোনা: আলফা আর বেটা দক্ষিণ এশিয়াতে বেশি ভাল করতে পারছে না। তুই ওখানে যাবি ডেলটা।
ডেলটা: ঠিক আছে।
করোনা: তোকে এমনভাবে তৈরি করেছি যেন বাতাসে ছড়াতে পারিস। এবার দেখি মানুষ আমাদের ঠেকায় কি করে।
ল্যামবডা: আর আমি?
করোনা: তুই আমার গোপন অস্ত্র ল্যামবডা। আপাতত চুপচাপ, পরে যাবি দক্ষিণ আমেরিকা।
আলফা: শুনেছি মানুষ আমাদের তাড়াতে ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলেছে।
করোনা: চিন্তা করিস না, এতা মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে অনেকদিন লাগবে।
বেটা: ততদিন পৃথিবীতে আমাদেরই রাজত্ব।
করোনা: আর ওরা ভ্যাকসিন নিলেই কি, আমরা নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ফিরে আসব। যেমন ল্যামবডা, হা হা হা .
গামা ও ডেলটা: হুররে..
(করোনার দলের গান ও নাচ– ”আমরা নতুন যৌবনের দূত” গানের সুরে।)
গান: আমরা করো ভাইরাসের দল
আমরা ঘাতক, আমরা জঞ্জাল
আমরা করো ভাইরাসের দল
আমরা জীবন কাড়ি, আমরা জগত জুড়ে আনি অতিমারি
মানুষের জাড়িজুড়ি ভন্ডুল করে দেই … আমরা উত্তাল
আমরা ঘাতক, আমরা জঞ্জাল
আমরা করো ভাইরাসের দল।
(গাছ, পশু, পাখি, মাছের প্রবেশ)
করোনা: তোমরা সবাই কি মনে করো?
গাছ: তোমরা বলেছিলে মানুষকে ভয় দেখাবে।
বাঘ: এভবে মানুষ মারছো কেন?
হরিণ: কেন মারছো?
আলফা: সে কি, আমরা তো তোমাদের ভালোর জন্যই করছি।
পাখি: আমাদের ভাল করতে হবে না।
মাছ: মানুষ না থাকলে কোন মজাই থাকবে না।
প্রজাপতি: আর মানুষ মারলে তোমাদের সাথে আমরা নেই।
বাদর ও ব্যাঙ: নেই … নেই ..

দৃশ্য ৪

(দুজন বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে)
বৈজ্ঞানিক ১: আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
বৈজ্ঞানিক ২: কি ব্যাপার বস্, আজ খুব খুশী দেখছি।
বৈজ্ঞানিক ১: আরে কোভিড ভ্যাকসিন ট্রয়াল সফল।
বৈজ্ঞানিক ২: সব ঠিকমত কাজ করছে?
বৈজ্ঞানিক ১: করছে মানে, একেবারে একশভাগ।
বৈজ্ঞানিক ২: ওরে বাঁচাধন করোনা, তোমার মানুষ মারার দিন শেষ হয়ে আসছে।
বৈজ্ঞানিক ১: তুমি তাড়াতাড়ি সবাইকে ভ্যাকসিন দেবার ব্যবস্থা কর।
বৈজ্ঞানিক ২: আমি এখুনি ওদের নিয়ে আসছি।
(বেরিয়ে যায় এবং অন্যদের নিয়ে ফিরে আসে। সবাই ভ্যাকসিন নিয়ে বেরিয়ে যায়।)

দৃশ্য ৫

করোনা: কি হল সব, মন খারাপ কেন?
ডেলটা ও বেটা: সব মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসছে।
ল্যামবডা ও গামা: এবারের মত আমাদের দিন শেষ।
(বৈজ্ঞানিকদ্বয়সহ মানুষের প্রবেশ)
মানুষ: আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা – করোনা অতি ক্ষুদ্র তোরা ..
করোনা গং: ছোট বলে করোনা হেলা –জানটা বাঁচাও এই বেলা ..
মানুষ: টিকা এল মোদের ঢাল, ছিহ্ন হল তোদের জাল …
করোনা গং:বা .. বা .. সব ভ্যাকসিনওয়ালা – পালা সবাই পালা …
(করোনা গং বেরিয়ে যায়, মানুষের বিজয় উল্লাস)
(ব্যাকড্রপ ভিডিও তে দেখা যায় করোনা গং)
করোনা গং: শোন হে মানুষ, আমরা -
আবার আসিব ফিরে, শত মানুষের ভীড়ে
এই পৃথিবীতে, হয়ত কোভিড নয়
নতুন কোন রূপে, নতুন ঝামেলা নিয়ে …

ধারা বর্ণনা : পৃথিবীতে জীবনের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মত অনুজীব। যুগেযুগে এরা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে মহামারি অতিমারি দিয়ে। মানুষ তার মেধা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে এসব প্রতিহত করেছে বারবার। কোভিড ১৯ অতিমারিকেও আমরা জয় করব ভ্যাকসিন দিয়ে।