কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৈশাখী মেলা ও বলি খেলার নামে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে গত ৩দিন ধরে এ জুয়ার আসর চলছে। স্থানীয়রা এ জুয়ার আসর বন্ধের দাবি জানালেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এতে জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানিয়েছে, এ জুয়ার আসরকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় চুরি-ডাকাতি, মারামারিসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে।
এলাকাবাসী আরো জানিয়েছে, এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা এ জুয়ার আসর বসিয়েছে। ২২ এপ্রিল থেকে এ জুয়ার আসর চলছে। ৩ দিনের এ আয়োজন শেষ হলে ওই এলাকার আশপাশে আবারও এ জুয়ার আসর অব্যাহত থাকবে বলে আয়োজকদের একটি সূত্র জানিয়েছে। থানা ও উপজেলা প্রশাসনের বাঁধা না পেলে এভাবে পর্যায়ক্রমে জুয়ার আসর নির্বিঘ্নে চালানো হবে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ জুয়ার আসর বসিয়ে এলাকার একাধিক রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এদের মধ্যে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবছার কামাল সিকদার, সাবেক ইউপি সদস্য জসিমুল ইসলাম, রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিক, স্থানীয় বাসিন্দা জালাল, মিজান, আবদুর রশিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউপি সদস্য আবদুল করিম জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে একটি সমবায় সমিতির নামে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এ বলি খেলার অনুমতি নিয়েছে। জুয়ার আসর সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব বন্ধ করতে হলে আইন শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার দেশের যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান ও কর্মমুখি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আগামীদিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এলাকার কুচক্রী মহল জুয়ার আসর বসিয়েছে। তিনি অবিলম্বে এ ধরনের অসামাজিক, অনৈতিক জুয়ার আসর বন্ধের প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।
রামুর বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ জানিয়েছেন, ৮০-৯০ দশকে রামু বাজারের পূর্বপাশে বাঁকখালী নদীর তীরে একটি পতাকা টাঙ্গিয়ে মাসের পর মাস জুয়ার চালানো হতো। জনতার দাবির প্রেক্ষিতে সেই আসর বন্ধ হয়েছিলো। এখন রামুতে আবার সেই পুরোনো আতঙ্ক জুয়ার আসর চলছে। এসব আসরে থাকা জুয়াড়িরা দিনের বেলা এসব আসরে জুয়া খেললেও রাতে ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপকর্মে মেতে উঠে। তাই প্রশাসনের উচিৎ অবিলম্বে এসব আসর বন্ধ করে রামুকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা।
কক্সবাজারের চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী, রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা, রশিদনগর ও ফতেখাঁরকুলসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক জুয়াড়ি সিন্ডিকেট রামুতে চলতি মাসে বৈশাখী মেলার নামের জমজমাট জুয়ার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রামুর জোয়ারিয়ানালায় বলি খেলার নামের এ জুয়ার আসর শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যান এম এম নুরুচ ছাফা জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ ভাই ভাই সমিতির নামের একটি সংগঠন শুধু বলি খেলার জন্য অনুমতি নিয়েছে। জুয়ার আসরের খবর পেয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছে তাই জুয়ার আসর বন্ধে প্রশাসনকে বেশি কঠোর হতে হবে। তিনি আরো জানান, থানা ও উপজেলা প্রশাসন এসবের অনুমতি দিলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
রামু থানার ওসি আপেল্ল্যা রাজু নাহা জানিয়েছেন জুয়া খেলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদ হোসেন জানান, জুয়া খেলা হবে না সেই শর্তে বলি খেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বলি খেলার নামে জুয়ার খেলার আসর বসালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(টিটি/এএস/এপ্রিল ২৪, ২০১৪)