শেখ সাদ বীন শরীফ, নড়াইল : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন হলো নড়াইলবাসীর স্বপ্নের চারলেনের সড়ক বাস্তবায়ন প্রকল্পটি। এমন সংবাদে খুশি নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হয় এ দাবি বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের। এতে করে শহরের যানযট মুক্তসহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে নড়াইবাসী।

এদিকে প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানীয় প্রদঅনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নড়াইলবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।

জানা গেছে, ঢাকাগামী পরিবহণের জন্য ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক হিসেবে কাজ করে। নড়াইল শহরের ওপর দিয়ে যাওয়া এই মহাসড়কের দুই পাশে কয়েকটি মার্কেট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রয়েছে হাট-বাজার, বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, ডায়াগোষ্ট্রিক সেন্টার, ঔষধের দোকানসহ নানা স্থাপনা। যার ফলে যানবাহনের চাপে এই মহাসড়কের বিশেষ করে নড়াইল শহরের ভেতর যানজট লেগেই থাকে। এতে করে এ মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের প্রতিনিয়ত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই যানজটের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে এ মহাসড়কের নড়াইল শহরাংশের ওপর দিয়ে যাওয়া ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সৌমেন চন্দ্র বসু লিখেছেন, সমৃদ্ধির পথে আরো একধাপ এগিয়ে, আমাদের প্রাণের নড়াইল। “নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (৮০৬-এন) ” তথা নড়াইল শহরের মূল সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প আজ ২৩ নভেম্বর ২০২১ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে। নড়াইলবাসীর প্রাণের দাবি, স্বপ্নের এই সড়ক বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করায় আমরা নড়াইলবাসী আন্তরিক ধন্যবাদ ও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধির পথে নড়াইল এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাকে ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয়কে। যিনি নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার অনুরোধে এই সড়ক বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ধন্যবাদ জানাই মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান এমপিকে। যিনি এই প্রকল্প অনুমোদনে অনেক সহযোগিতা করেছেন।

যিনি নড়াইলের উন্নয়ন বিষয়ে সরকারের উচ্চ-পর্যায়ে সবসময় যোগাযোগ রেখে নিরলসভাবে কাজ করছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য, দি আর্কিটেক্ট অব মডার্ন নড়াইল মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপিকে আমরা অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যিনি নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের এই প্রাণের দাবিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

শহরের ভেতরের মূল রাস্তায় ঢুকলেই নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ তীব্র যানজট ও অপ্রশস্ত সড়ক।আমরা জানি, যেকোন উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে অবশ্যই মানসম্মত ও নির্বিঘ্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অন্যতম পূর্বশর্ত। সেই হিসাবে, নড়াইলের এই যানজট ও সড়কের অপ্রশস্ততার লাগাম এখনই না টেনে ধরলে ভবিষ্যতে নড়াইলবাসী অন্য উন্নয়ন কাজের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাবেন না। সেজন্য এই জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নে কাজ নড়াইলবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। যার জন্য নড়াইল জেলার সর্বস্তরের মানুষের বিপুল সমর্থন ছিল।

“নড়াইলের সড়ক প্রশস্তকরণ একনেকে অনুমোদিত”, এমন একটা লেখা আজ টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠতে দেখছি। যা একসময় আমরা অন্য জেলার ক্ষেত্রে দেখতাম। এখন আমাদের জেলার খবর দেখছি। এটাই আমাদের অর্জন। এটাই নড়াইলের প্রত্যাশিত উন্নয়নের চিত্র। নড়াইলের এগিয়ে যাওয়ার এই সুখবর আজ সমগ্র দেশবাসীর সাথে আমরাও দেখছি আর নিজের কাছে ভালো লাগছে যে আমরাও এই মাটির সন্তান।

এই জনপদের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার প্রতি ভরসা রাখুন। উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়ন হবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু লিখেছেন,” নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (৮০৬-এন) “প্রকল্প আজ মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদিত হয়েছে।

নড়াইলবাসীর প্রাণের দাবি, স্বপ্নের এই সড়ক বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ ও সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ধন্যবাদ মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয় ও মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান এমপিকে। বিশেষভাবে ধন্যবাদ, নড়াইলের কৃতি সন্তান মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে।

এছাড়া নড়াইল রোডস এন্ড হাইওয়েজের প্রকৌশলসহ সচিবালয় পর্যন্ত যেসকল কর্মকর্তা এই প্রকল্পের বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র মতে, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্প। আর এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে নড়াইল শহরের সড়ক প্রশস্ত করার মাধ্যমে যানজট নিরসন এবং এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রে আরো জানা যায়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৪ জানুযারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর মহাসড়কের নড়াইল শহরাংশটি ৫ দশমিক ৫০ মিটার চওড়া। সড়কটির দুই পাশে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, গ্রোথ সেন্টার ইত্যাদি অবস্থিত। ফলে খুলনা বা বেনাপোল থেকে ঢাকার পথে সড়কের এই অংশটিতে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই থাকে। এ কারণেই নড়াইল শহরাংশের ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করতে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে বলেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। পরে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত ১৪ জানুয়ারি পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ও পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুণর্গঠন করেছে। পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পুণর্গঠিত ডিপিপিতে ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের আওতায় প্রথমত সড়কটির ৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নীত করে পুণঃনির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৭৭ কিলোমিটার সড়ক মজবুত ও প্রশস্ত করা হবে। এর মধ্যে ৫ দশমিক ২৯১ কিলোমিটার হার্ড শোল্ডার ও ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সার্ফেসিং করা হবে। এছাড়া ২ লাখ ৩০ হাজার ৯০৮ দশমিক ৭১ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, আরএইচডি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত টি-জাংশন সড়ক উন্নীতকরণ, একটি ৩১ দশমিক ৮২৮ মিটার পিসি গার্ডার সেতু পুণঃনির্মাণ, দুইটি আরসিসি বক্স কালভার্ট পুনঃনির্মাণ, আরসিসি বক্স ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণ ও ইন্টার-সেকশন ডেভেলপমেন্ট করা হবে।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে নড়াইল শহর যানজট নিরসন হবে। পাশাপাশি নড়াইল জেলা সদরের সঙ্গে খুলনা, বেনাপোল ও যশোর জেলার যোগাযোগ নিরবিচ্ছন্ন ও নিরাপদ হবে। যানজট না থাকলে স্থানীয়দের যে শ্রমঘণ্টা বেঁচে যাবে, তাতে বাড়বে উৎপাদনশীলতা। প্রকল্প এলাকার আর্থসামজিক ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে।

(এস/এসপি/নভেম্বর ২৩, ২০২১)