স্টাফ রিপোর্টার : ধর্ষণের একটি মামলায় এক আসামির জামিন মঞ্জুর করে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আপিল বিভাগের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন বলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, তিনি কোনো ধরনের ফৌজদারি বিষয় পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নন।

সোমবার (২২ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। বুধবার (২৪ নভেম্বর) রায়ের লিখিত অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিচারক কামরুন্নাহারের ঘোষণা করা রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার মামলায় রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরে তাকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আদালতে না বসতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।

এরপর সোমবার রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ দেওয়া বিচারক কামরুন্নাহারের বিচারিক (ফৌজদারি) ক্ষমতা কেড়ে নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

তবে আপিল বিভাগ যে মামলার বিষয়ে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেটি অবশ্য রেইনট্রির ঘটনায় করা মামলা নয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাতিরঝিল থানায় করা ধর্ষণের অন্য এক মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের পরও আসামিকে জামিন দেন তিনি।

নথিপত্র পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, মামলার পুরো রেকর্ড না দেখার (বিচারক কামরুন্নাহার) বিষয়টি খারাপ উদ্দেশ্য ইঙ্গিত করে।

মোছা. কামরুন্নাহার ছিলেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক। তিনি রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ১১ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। তবে ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশকে মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দেওয়া বিচারক কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহারের আদেশ পেয়ে তিনি গত ১৪ নভেম্বর এজলাসে বসেননি।

এমন পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন আসে আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও জনসাধারণের পক্ষ থেকেও। এরপর গত শনিবার (১৩ নভেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে জন্য একটা চিঠি লিখবেন।

এরপর গত ১৪ নভেম্বর সকালে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওই বিচারককে আদালতে বসতে নিষেধ করেন। একই সঙ্গে কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৫, ২০২১)