স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও তা পরিপূর্ণভাবে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। না হলে এখনও জনগণকে দাবি করতে হয় নির্বাচন ব্যবস্থা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে নানা অভিযোগ পাচ্ছি। আমাদের প্রার্থীরা সবসময় একটা কথাই বলছেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা চাই না। সবাই যাতে সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারি সেই ব্যবস্থা চাই।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, জাতির পিতা কোনো বিশেষ দলের নিজস্ব সম্পদ নয়। তিনি এ দেশের সব দলের সব মানুষের জাতির পিতা। তাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইলে তার সার্বজনীন চরিত্রকে খাটো করা হয়। বিশ্বে অনেক দেশে জাতির পিতা আছে। তারা তাদের জাতির পিতাকে যেভাবে সার্বজনীন সম্মান দিয়ে রাখে আমাদেরও সেভাবে দিতে হবে। জাতির পিতাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত রাখতে হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের শেষ অংশে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিক আচরণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক দলসমূহকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’ আমরাও মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সহমত পোষণ করি। দেশ থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি সমূলে বিনষ্ট করতে হবে। প্রয়াত কিংবা জীবিত জাতীয় নেতানেত্রী, রাষ্ট্রনায়কদের প্রতি সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। কেউ যদি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাকে অসম্মান বা গালি দিয়ে কথা বলেন, তিনি নিজে তার নেতা নেত্রীর প্রতি পাল্টা অসম্মান করার সুযোগ সৃষ্টি করলেন।

জিএম কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে অনেকেই (লোকদেখানো) কান্না করেন, কিন্তু সবাই কি তার আদর্শ বুকে ধারণ করেন? বঙ্গবন্ধু তো দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আজকে করাপশনের কথা বলতে হয়। এ বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষক করে না। করাপশন বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন। রাস্তা খুঁড়তে যান করাপশন। খাদ্য কিনতে যান করাপশন, জিনিস কিনতে যান করাপশন। বিদেশে গেলে টাকার উপর করাপশন। তারা কারা? আমরা যে ৫ পারসেন্ট শিক্ষিত সমাজ তারা।’এভাবে সত্য কথা বলতে পারতেন বলেই বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পেরেছিলেন।

সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এই কথাটির দাবি এখনো আমরা শুনি। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কিছু দিক আমাদের সংবিধান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ থাকলে কোনো সময়েই আমাদের দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। আজ আমরা আনন্দ উৎসাহ নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। আমি চাই তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আনন্দ উৎসাহ নিয়ে যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাধীনতার হীরকজয়ন্তী উদযাপন করতে পারে। সে পথ প্রশস্ত করে যেতে হবে আমাদেরই। আজ আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক, বিগত দিনের ব্যর্থতা, গ্লানি মুছে ফেলে এগিয়ে যাবো ঐক্যবদ্ধভাবে।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৫, ২০২১)