ইসমাইল জাবিউল্লাহ


আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নতুন কোনো বিষয় নয়। নিত্যনৈমিত্তক ঘটেই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে এটা যেনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে গেছে। পত্রিকা আর টেলিভিশনের প্রধান শিরোনাম ঘুরেফিরে সড়ক দুর্ঘটনাই। যা সাধারন পথচারী আর যানবাহনে আরোহী যাত্রীদের প্রধান দুশ্চিন্তা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কের অব্যবস্থাপনা যেনো সমাধান করার কেউ নেই।

২০১৮ সালের সড়ক আন্দোলন হওয়ার পর সরকার কিছু আইন প্রনয়ন করলেও সেগুলো বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায় নি। যার ফলশ্রুতিতে আবার নতুন করে সড়ক দুর্ঘটনায় সামনে চলো এসেছে। গত ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে গাড়ি ধাক্কায় নটরডেম কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যু। ২৫ তারিখ চাঁদপুরে ৪ শিক্ষার্থী নিহত। এছাড়া প্রতিনিয়ত গনমাধ্যমের অগোচরে শত শত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে তার ইয়ত্তা নাই। এর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেনো কোনো মাথা ব্যথ্যা নেই। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে একটা অদৃশ্য শক্তি এসে আন্দোলন নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করে যা সম্পূর্ন বেআইনি।

সড়কের এরকম বেপরোয়া ড্রাইভিং নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু কার্যকর উদ্যোগ জরুরি নিতে হবে। ফিটনেস বিহীন গাড়ি যেনো কোনোভাবে রাস্তায় চলাচল করতে না পারে। ড্রাইভার যেনো নেশাগ্রস্ত বা মোবাইল টিপা অবস্থায় গাড়ি না চালাতে পারে। ড্রাইভারকে প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা। লাইসেন্স বিহীন পরিবহন ও ড্রাইভার দুটোই কঠোর হস্তে দমন করা। ট্রাফিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেয়া। ঝুকিপূর্ণ স্থানে ফ্লাইওভার তৈরি করা। অপরাধীর দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করা। ভুক্তভোগীকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণ আধুনিক গতি মেশিন স্থাপন করা। শহরের বেশির ভাগ সড়কের ফুটপাত হকারদের দখলে সেগুলো দখল মুক্ত করা। সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক আলাদা একটা প্রতিষ্ঠান গঠন করা। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা বন্ধ করতে হবে।

এসকল বিষয় গুলো যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তত তাড়াতাড়ি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে প্রত্যাশা করি। অন্যদিকে যাত্রী বা পথচারীদেরকেও রাস্তায় চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রাস্তা পারাপারে ওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার, সড়কে হাঁটার সময় মোবাইল না চালানো ইত্যাদি বিষয়গুলো মেনে চলা। সর্বোপরি দেশের চলমান সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মানুষ রক্ষা পেতে চায়। পথচারী, চালক, সড়ক পরিবহন সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাইকে সবার দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। সবার সহযোগিতা ছাড়া আমাদের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সবকিছু রাতারাতি হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা চরম বোকামি হবে। সময় লাগবে, সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। তবেই আমাদের সড়ক হবে নিরাপদ।

লেখক :শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।