রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কোনপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে দেবহাটা ও কালিগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। এখন চলছে গণনার কাজ। এর আগে ভোটকেন্দ্রে নারীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মত। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সাতক্ষীরার দুই উপজেলায় শতকরা সত্তর ভাগেরও বেশি ভোট পড়েছে আশা করছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর,নলতাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা যায়,নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। পুরুষরাও ভোট দিচ্ছেন শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে। প্রশাসনিক নজরদারী ছিল চোখে পড়ার মত। সকাল ৯টায় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারুলগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের লম্বা লাইন পড়তে দেখা যায়।

একই ভাবে চাঁচাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর পিকে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে শান্তিপূর্ন ভোটগ্রহন শুরু হয়। সকালে উপস্থিতি একটু কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়, ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে নির্দেশনা দিচ্ছেন গোলাম রসুল নামের একজন আওয়ামী লীগের নেতা। এমন অভিযোগ পাওয়া মাত্র প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তৎপর হয়ে ওঠেন।

এসময় মাইকযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভোট কেন্দ্রের সামনে থেকে যারা ভোট দেয়নি, তাদের ব্যতিত বাকিদের চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। এসময় বিশৃঙ্খলার চেষ্টাকারী দলীয় নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে তাড়িয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে শনিবার দিবাগত রাত ২টার টার দিকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশর্^বর্তী মোড়ল পাড়ানামক স্থান থেকেআব্দুল মজিদ ও আবু মুছা নামের দুই সন্ত্রাসীকে আটক করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে ৩০ ককটেল ও দুইটি শাটারগান উদ্ধার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন খুলনা র‌্যাব ৬ এর সাতক্ষীরার দায়িত্ব প্রাপ্ত স্কোয়াডঅন লিডার ইশতিয়াক আহম্মেদ। গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল মজিদ কালিগঞ্জ উপজেলার চাঁচাই গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে এবং আবু মুছা একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মুজিবর রহমানের ছেলে। ভোটে নাশকতার উদ্দেশ্যে তারা ককটেল জড়ো করেছিলেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ চলছে। এই দু’টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮৫ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ২০০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ইতিমধ্যে অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি ছিল।

সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬৮ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪৬৭ জন এবং দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৫৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

এই দুই উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৯১ জন। এরমধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৮৬৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৮০ ও নারী ভোটার ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৮৪ জন। এছাড়া দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫২ হাজার ৯০১ জন এবং নারী ভোটার ৫২ হাজার ১৩৬ জন। দুই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৬১ টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৮৫৩।

পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি কেন্দ্রে একজন এস.আইয়ের নেতৃত্বে ৫ জন পুলিশ সদস্য ও দুজন সশস্ত্রসহ ১৭ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই উপজেলায় ৫জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি ৩প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও ৩ প্লাটুন র‌্যাব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে ছিলেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল কবির জানান, দুই উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। এখন ভোট গণনা চলছে। ভোট প্রদানের হার ৭০ ভাগেরও বেশি হবে বলে আশাবাদ তার।

জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারিবাহিনীর চ্যালেঞ্জ ছিল সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে সহায়তা করা। পুলিশ সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে। কেউ বিশৃঙ্খলা করার সাহস পায়নি। শতভাগ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

(আরকে/এএস/নভেম্বর ২৮, ২০২১)