স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য স্থল, সমুদ্রবন্দর ও রেলস্টেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রী বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত যাত্রীদের দিকে কঠোর নজরদারি ও মনিটরিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও মধ্যবর্তী বিভিন্ন দেশ হয়ে যাত্রীদের বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে। তাই আফ্রিকা ও ওমিক্রন শনাক্ত দেশ থেকে কোনো যাত্রী বাংলাদেশে আসছে কিনা সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।

বেসামারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমানচলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ওমিক্রন যেন কোনোভাবেই দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আকাশপথ, স্থল, সমুদ্রবন্দরসমূহে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বন্দরগুলোর করণীয় কী তা নির্ধারণে সোমবার (২৯ নভেম্বর) আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক বসার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হতে পারে বলে তারা জানান।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেদিন থেকে সব দেশকে করোনার নতুন এ ধরন সম্পর্কে সতর্ক করেছে, সেদিন থেকেই সাউথ আফ্রিকা ও অন্যান্য যেসব দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সেসব দেশের যাত্রীদের প্রতি অধিকতর খেয়াল রাখা হচ্ছে।

তিনি জানান, আফ্রিকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও অন্যান্য দেশ হয়ে যাত্রী আসেন। তবে ওমিক্রন সংক্রমণের খবরের পর আইভরিকোস্ট থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে দুজন আফ্রিকান যাত্রী দেশে এসেছেন। বিমানবন্দরে তাদের প্রয়োজনীয় হেলথ স্ক্রিনিংসহ (টিকা সনদ পরীক্ষা, বিগত ১০ দিনের ভ্রমণকারী দেশের সংখ্যা এবং করোনার উপসর্গ রয়েছে কিনা ইত্যাদি) প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (২৮ নভেম্বর পর্যন্ত) দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সর্বমোট ৯ হাজার ৪৯২ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে শাহজালালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭ হাজার ৭৮০ জন, স্থলবন্দরে ১ হাজার ৪৪৯ জন এবং সমুদ্রবন্দরে ২৬৩ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শুরু থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বন্দরে আগত মোট ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৪ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭ হাজার ৭৮০ জন, স্থলবন্দরে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৮ জন, রেলস্টেশনে ৭ হাজার ২৯জন এবং সমুদ্রবন্দরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশের জন্য সতর্কতামূলক ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনায় আক্রান্ত দেশসমূহ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

রবিবার (২৮ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডাইরেক্টর, সিডিসি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা জারি হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, সাউথ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ওমিক্রন’র সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব দেশকে করোনার এ ধরন সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি এবং লেসোথোর সঙ্গে আকাশপথ ও সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। করোনার সাউথ আফ্রিকান এ ভ্যারিয়েন্ট করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও অধিক সংক্রামক বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাই এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৯, ২০২১)