চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : বাংলাদেশকে আকর্ষনীয় পর্যটন গন্তব্যের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে পর্যটন করপোরেশন পরিচালিত চট্টগ্রামস্থ হোটেল সৈকতের ‘কর্ণফুলী রেস্টুরেন্টে’ খাবারের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।

প্রতিটি খাবারেই অটোভাবে বিলের সঙ্গে সরকারি করের পাশাপাশি যুক্ত করছে সার্ভিস চার্জ বাদ আরও ১০ শতাংশ টাকা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক গ্রাহকরা। এসব অভিযোগ ছাড়াও অর্ডারের পর খাবার পরিবেশনে বিলম্ব এবং মান নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। একাধিক ভোক্তারা আবার রেস্টুরেন্টের পরিবেশ নিয়েও কথা তুলেছেন। সন্ধ্যার পর হোটেলের এক অনাকাঙ্খিত দৃশ্যের কথাও অনেকেই জানান।

নভেম্বর মাসের হোটেলের বিল নম্বর ৭৩৩৮৬, কেওটি নং-৮৩৮০৪, বিল নম্বর ৭২৮৮২, কেওটি নং-৮৩২০৪, বিল নম্বর ৭২৬৫৫, কেওটি নং-৮২৯২৯, বিল নম্বর ৭২৮০০, কেওটি নং-৮৩১০৫, বিল নম্বর ৭৩১৭০ কেওটি নং-৮৩৫৪২ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক বাটি থাই স্যুপের দাম ৩০০ টাকা, এক প্লেট চিকেন ফ্রাইয়ের দাম ৩৫০, দেড় লিটার পানির দাম ৪৫ টাকা, এক প্লেট ভাতের দাম ৭০ টাকা, এক প্লেট সবজির দাম ৮০ টাকা, এক বাটি রান্না করা চিকেন ২৫০ টাকা, সাধারণ সালাদ ৬০ টাকা, দুই পিস পরাটা ৬০ টাকা, ২ পিস চাপাটি ৫০, ডাল এক বাটি ৬০ টাকা, এক পিস চিকেন স্যান্ডউইচ ১৪০ টাকা, এক কাপ চা ৩০ টাকা।

উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হলো-রেস্টুরেন্টে এ্যাকুয়াফিনা নামক দেড় লিটার পানির বোতল সরবরাহ করলেও বিলে লিখা হয় ৬ গ্লাস পানির দাম ৪৫ টাকা। অথচ এ্যাকুয়াফিনা দেড় লিটার পানির বোতলের গায়ে দাম লিখা আছে মাত্র ২৫ টাকা। এক বোতল পানির দামে ২০ টাকা বেশি। আর রেস্টুরেন্টের বিলের হিসাবে ধরা হলে এক গ্লাস পানির দাম ৭ টাকা ৫০ পয়সা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেস্টুরেন্টটিতে এক পিস টিকেট রুপচাঁন্দার দাম রাখা হচ্ছে ২৫০ টাকা। কোরাল মাছের দাম রাখা হচ্ছে আরো বেশি। অথচ প্রতিটি খাবারের দামই আশপাশের অন্যান্য রেস্টুরেন্টের থেকে দ্বিগুণ বা এর থেকেও বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভোক্তারা।

ক্রেতারা বলছেন, ভিন্ন কৌশলে খাবারের রেইটে তোলা হচ্ছে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড়াও যুক্ত করা হয়েছে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। সব মিলিয়ে ২৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ কোন অনুষ্ঠান বাবদে ৪ হাজার টাকার খাবার খেলে মোট বিল গুনতে হবে ৫ হাজার আর ১০ হাজার টাকায় বিল হবে ১২ হাজার টাকা। এ যেন গলাকাটা বাণিজ্য।

এছাড়াও রেস্টুরেন্টে কেউ খাবার বা নাস্তা করতে আসলেই গাড়ি পার্কিং এর নামে টোকেনে আদায় করা হচ্ছে ৬০ থেকে ২০০ টাকা। যেখানে পার্কিং সেখানে ব্যবসা। হোটেলের কার্যনির্বাহী অফিসারেরা ও ইউনিট ম্যানেজারেরা এসব দেখেও দেখছেন না। দিন দিন হোটেলের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

রেস্টুরেন্টটিতে আগত একজন অতিথির বিলের কপি থেকে দেখা যায়, প্রতি কাপ রঙ চায়ের দাম রাখা হয়েছে ৩০ টাকা। যেখানে পাশের এশিয়ান এস আর হোটেলে একই মানের চায়ের দাম ২০ টাকা।

ঠিকাদারি ব্যবসায়ি মালেক রানা ও মনির উদ্দিন নামের দুই ভোক্তা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত এই হোটেলে নাস্তা ও খাবার খেতে আসি। কিন্তু অর্ডারের পর কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। গরম খাবার পরিবেশন করে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করলেও বেশির ভাগ সময় দেখা যায় মাছের পিসেও সমস্যা। অনেকটা পচাঁ মাছ দিয়ে খাবার পরিবেশন করেন। উন্নত রেস্টুরেন্ট দাবি করলেও পর্যটন করপোরেশন পরিচালিত হোটেলের এ কেমন অবস্থা?’

ইকবাল নামে আরেকজন ভোক্তা জানান, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বাপক)-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মহৎ হলেও সৈকত হোটেলে যে খাবার খেতে ৫০০ টাকা, একই খাবার অন্য রেস্টুরেন্টে ২০০ টাকা খাওয়া যায়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন-এর প্রধান কাজ হচ্ছে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, পর্যটকদের সেবা প্রদান এবং পর্যটন সম্পদের সুষ্ঠু বিকাশের মাধ্যমে দারিদ্র হ্রাস করা। কিন্তু সৈকত হোটেলের কাজ দেখে মনে হচ্ছে পকেট কাটার মেশিন বসিয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘তাদের খাবারের যে দাম সেটা অবশ্যই মেন্যুকার্ডে উল্লেখ করে রাখতে হবে। ভোক্তারা এটি দেখেই খাবেন। ভোক্তারা যদি মনে করেন, এখানে দাম বেশি তাহলে তিনি ওখানে না-ও খেতে পারেন। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ সার্ভিস চার্জ রাখা যাবে কি যাবে না, সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে সার্ভিস চার্জের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ঘোষণা দিতে হবে। কাস্টমারকে জানিয়ে রাখতে হবে যে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ রাখা হবে। এটি না করে থাকলে সেটি অপরাধ হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন হোটেল সৈকতের ইউনিট ম্যানজার মোঃ সরওয়ার উদ্দিন ও সহকারি কার্যনির্বাহী অফিসার অনিন্দ্য চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের এখানে পানির দাম বেশি সেটা সত্য। চাইলে কাস্টমারেরা রেস্টুরেন্টে আসার সময় পানির বোতল নিয়ে আসতে পারে। আমরা কাস্টমারকে পানির বোতল সরবরাহ করলেও দাম নিচ্ছি প্রতিগ্লাস হিসেবে। কারণ একটাই; আমাদের বেতন দেওয়া হয় এই পানির বিল থেকে। আর পার্কিং চার্জ এর বিষয়টি আমরা দেখব কিভাবে কী করা যায়।’

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) আ. ন. ম. মোস্তাদুদ দস্তসীর এবং উপ-ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) প্রদীপ কুমার গাঙ্গুলী বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ থাকলে আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো। সেবার নাম দিয়ে ভোক্তাদের হয়রানি করা যাবে না।’

(জেজে/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২১)