রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার পুষ্পকাটি গ্রামে ৯টি বাড়িতে ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে।

অভিযোগ, নির্যাতিতরা নৌকা প্রতীক নিয়ে কুলিয়া ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থী আসাদুল ইসলামের কর্মীসমর্থক। আর হামলাকারিরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কুলিয়া ইউনিয়নে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রাথী আসাদুল হকের কর্মী সমর্থক।

পুষ্পকাটি পূর্বপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট হায়দার আলী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন জানান, গত ২৮ নভেম্বর নির্বাচনে তারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। কিন্তু নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রাথী আসাদুল ইসলাম হেরে যান। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আসাদুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করায় সোমবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আসাদুল হকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন শাওন ও তিন নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানির নেতৃত্বে দেলোয়ারে হোসেন শাওন, হাশেম সরদার, রহিম গাজী, তরিকুল ইসলাম, শহীদ গাজী, ঘর জামাই আসাদুল , আসাদুল ইসলামসহ দুই শতাধিক শতাধিক সন্ত্রাসী হাতে রাম দা, শাবল, লোহার রড, জিআই পাইপ নিয়ে তাদের বাড়িসহ গোলাম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, রবিউল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, ফজলুর রহমান , আবুল কাশেম, মেহেদী হাসান ও শাহীনুজ্জামান রিপনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় ওই সব পরিবারের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এ ছাড়া হাফিজুর রহমানের মুদি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। সহিংসতার খবর পেয়ে অনেকেই বাড়ি চেড়ে অন্যত্র চলে যান।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে পুষ্পকাটি গ্রামে গেলে রবিউল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, পাড়ায় নৌকা কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর করা হচ্ছে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে বাচ্চাদের নিয়ে তিনি অন্যত্র চলে যায়। এরপরপরই বাড়ির উঠানে রাখা তার দেবর বাবুল ইসলামের ইজিবাইক, ঘরের দরাজা ও ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। সন্ত্রাসীরা তাদের খুন করার হুমকি দিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের ছয় মাসের অন্তঃস্বতা স্ত্রী মারিয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তাদের গোয়ালঘর ও রান্না ঘরের টালির চাল ভাঙচুরের পাশপাশি বসত ঘরের দরজা ও এসবেসটর্স ভাঙচুর করা হয়। মারপিট করা হয় তাকে সহ প্রতিবন্ধি শিশু নয়ন ইসলামকে। তাদেরকে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। নৌকার করার সাধ মিটিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বাড়ির ভাঙচুরের দৃশ্য বর্ণনা করতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাশেম শেখ এর স্ত্রী সাবিনা খাতুন। তিনি হামলাকারিদের বিচারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক ও ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগোযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরে কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় শাহীনুজ্জামান রিপন বাদি হয়ে সোমবার রাতেই আসাদুল হকের ছেলে দোলায়ার হোসেন শাওন, নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য গোলামা রব্বানীসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় ১৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২১)