দীর্ঘশ্বাস


-মন খারাপ হলে আমি একা কোথাও দাঁড়িয়ে আকাশ দেখি।
আজও তাই হলো, একটা দু'টো দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইলাম
আকাশ পানে।

ওদিকে বুক বোঝাই মেঘ নিয়ে আকাশও দাঁড়িয়ে আছে নিস্পন্দ।

বললাম— 'এইযে মেঘের মিনার জমিয়ে আছো, কষ্ট হয় না?'
'হয়'— মেঘের ফাঁকে মুখ মেলে আকাশ তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো।
বললাম— 'তবে বৃষ্টি করে ঝরাচ্ছ না যে?'
আকাশ অল্পক্ষণ চুপ করে রইলো, তারপর বললো— 'পৃথিবী থেকে
বুক ভর্তি তাপ, উপেক্ষা ও চাপ নিয়ে জলীয় বাষ্পরা আমার বুকে
আশ্রয় নেয়। তাদের খানিক ঠান্ডা না করে বিদায় করা কি ঠিক
হবে?'
'তা জানিনা, তবে তাতে তোমার কী লাভ?'— মন খারাপের মাঝেই
কৌতুহল সমেত জিজ্ঞেস করলাম আকাশকে।
আকাশ হাসলো।

মেজাজ খারাপ হলো, দাঁত কটমট করে বললাম— 'হাসছো যে!
হাসার কী বললাম?'
'এরচেয়ে আরো ভারী কিছুও তো আশ্রয় দিতে হয়, যা তোমরা
পাঠাও আমার কাছে। মেঘ তো তবু বৃষ্টি করে ঝরিয়ে দিতে পারি,
তোমরা যা পাঠাও, তা চিরকালের জন্য আশ্রয় দিতে হয়। কই!
আমি তো সেসব আশ্রয় রাখতে তোমাদের থেকেও লাভ খুঁজি না।'

আমি হতভম্ব হলাম আকাশের কথা শুনে। তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস
করলাম- 'কী বলো! কী সেটা?'
আকাশ ক্লিয়ারকাট উত্তর দিলো— 'দীর্ঘশ্বাস।
রোজ তোমাদের পৃথিবী থেকে অসংখ্য মানুষ বুকভর্তি দীর্ঘশ্বাস
পাঠায় আমার ঠিকানায়। আমি তাদের সেই দীর্ঘশ্বাসও আশ্রয়
করে রাখি। আকাশ হতে হলে মেঘ আর মেঘের মতোই তাপ, চাপ
আর উপেক্ষা মিশ্রিত অন্যের বুক বোঝাই দীর্ঘশ্বাস আশ্রয় দেওয়ার
সক্ষমতা থাকতে হয়। আর লাভলোকসান খোঁজা যায় না।'

আমি আর কথা বলতে পারলাম না, পূর্বের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে মেঘ
এবং দীর্ঘশ্বাস আশ্রয় দেওয়া নিঃস্বার্থ নির্মল আকাশের দিকে
তাকিয়ে রইলাম বহুক্ষণ।