পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি। মহামারী করোনার মধ্যেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (জিটিসি)’র হাত ধরে টানা তিন বারের মতো লাভের মুখ দেখলো। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খনির অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে পাথর উৎপাদন অব্যাহত রেখে। খনিটি টানা তিন অর্থ বছরে মূনাফায় হ্যাট্রিক করেছে। 

গত ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত খনি পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। মধ্যপাড়া পাথর খনি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১২ লাখ ৮৭ হাজার টন পাথর বিক্রি করে আয় করেছে ২৯৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ থেকে নিট মুনাফা হয়েছে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ৯৩২ টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ২২ কোটি টাকা মুনাফা করে। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরেও খনিটি তিন বারের মতো লাভের মুখ দেখছে। শতাধিক বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ ও অর্ধশত দেশী প্রকৌশলী এবং সাড়ে ৭শ' দক্ষ খনি শ্রমিক দিনে-রাতে পাথর উত্তোলন করছে। তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উৎপাদন করছে। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি পূর্ণ মাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় পরপর তিন বছর ধরে লাভের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। মধ্যপাড়া পাথর খনি একমাত্র ভূ-গর্ভস্থ আগ্নেয় শিলা উৎপাদনকারী খনি হিসেবে দেশের পাথরের চাহিদা পূরণে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এ খনিটি কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ন্যায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে।

খনি সুত্রে জানা যায়, ১৯৭৩-১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) মধ্যপাড়া এলাকায় ১২৮ মিটার গভীরতায় কঠিন শিলা আবিস্কার করে। উত্তর কোরিয়ার মেসার্স কোরিয়া সাউথ কোঅপারেশন কপোর্রেশন (নামনাম) সাথে খনি উন্নয়নের ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ মূল চুক্তি হয়। ২০০৭ সালের ২৫ মে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়।

প্রতিদিন এক শিফটে পাথর উত্তোলন ৪০০-৫০০ মে.টন। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬ বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল খনিটির ভবিষৎ। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬ বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রণাবেণের দায়িত্ব দেয়া হয় জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) কে। জিটিসি তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার টন পাথর উৎপাদনে নয়া রেকর্ড গড়ার মাধ্যমে মধ্যপাড়া খনিকে লোকসানের কবল থেকে উদ্ধার করে প্রথম বারের মতো লাভের মুখ দেখে ২০১৮-১৯ অথর্ বছরে। জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২ সেপ্টেম্বর।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মো. ফরিদুজ্জামান বলেন- নতুন চুক্তি অনুয়ায়ী ৬ বছরে খনি ভূ-গর্ভে ১৪ টি স্টোপ (পাথর উৎপাদন ইউনিট) উন্নয়ন করবে। জিটিসি দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন করছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬ বছরে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর উত্তোলন করবে।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২১)