স্টাফ রিপোর্টার : ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, তোমাদের মেধা ও দক্ষতার ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। আমি তোমাদের একটি অনুরোধ করব- আর্টস, সায়েন্স, কমার্স, মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং যে যাই পড়না কেন, তাতে কোনো রকম অপছন্দ নেই। শুধু একটা শর্ত তোমরা পূরণ করো, সেটা হচ্ছে- প্রত্যেকেই ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করো। তুমি যাতে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারো, সেটাই ডিজিটাল দক্ষতা।

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডিজিটাল দক্ষতার ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে যত কথাই বলুক ইন্টারনেট ব্যবহার করাও একটি ডিজিটাল দক্ষতা। এই দক্ষতা তুমি অর্জন করবে। তবে অপব্যবহার করবে না। এটা তোমাদের জন্য একটা সুযোগ। তোমরা নিঃসন্দেহে সেটা কাজে লাগাবে। এজন্য কিন্তু তোমাদের প্রোগ্রামার হতে হবে না; বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। কিন্তু তোমার জীবনের সামনের দিনে যে কাজই করতে যাবে, তোমার এই দক্ষতা ব্যবহার করতে হবে।

মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আছি। ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি।
তোমরা জানো বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সেই দেশটাতে ডিজিটাল রূপান্তরের বীজ বপন করেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করার একুশ বছর পর এই দেশটাকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের অংশীদার করে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর রোপন করা বীজটাকে চারাগাছে রূপান্তর করেন। এরপর তিনি ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেন গত ১২ বছরে যা সারা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়েছে। তোমরা এই করোনাকালে তার পূর্ণ অবয়ব দেখতে পেয়েছো।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ সুষ্পষ্টভাবে শুধু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা বঙ্গবন্ধুর উন্নত, সমৃদ্ধ, শোষণ বঞ্চনাহীন সোনার বংলা গড়ে তুলবো।

উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

সুলতানা কামাল বলেন, আমি যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা রেখেছি, তখন নিজেকে বিশ্বমানব হিসেবে গড়ে তোলার সংকল্প করেছি। আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী। সেই সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। সুতরাং আমরা যেন যথাযথ উত্তরাধিকারীর মত আচরণ করে। ভালো উত্তরাধিকারী তার উত্তরাধিকারকে আরো সমৃদ্ধ করে। প্রাপ্ত উত্তরাধিকারকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে না।

এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, আগের দিনে সকাল নয়টা থেকে পাঁচটা নয়, কার্জন হলের বাতি রাতের বেলা অনেক সময়ই নিভতো না। ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মচারী সবাই একটা কালচার অব ক্রিয়েটিভিটিতে ছিলেন। এখনো কার্জন হলসহ অন্যান্য বিভাগ নিরলসভাবে জ্ঞান চর্চা বা সৃষ্টির সাধনায় নিয়োজিত আছে। তারপরও মাঝে মাঝে কথা থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে যে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই নেতৃত্বের স্থান ধরে রাখতে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। গতকাল যে উৎসাহ উদ্দীপনায় শতবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে তাতে আমি আশাবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্জাগরণের জন্য এটি একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা, আগামী শতাব্দিতে আমরা যেন জাতিকে আরও ভাইব্রান্ট, আরও ক্রিয়েটিভিটি, হিউম্যান ভ্যালোস রিচ সোসাইটি উপহার দিতে পারি। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করবো।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটি দেশে কত বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো বৈশ্বিক অবস্থানে কতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। আর এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ছাত্রদের মনে রাখা উচিত, প্রতিটি আন্দোলনের একটি যৌক্তিকতা থাকে।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০২, ২০২১)