নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরাঞ্চলের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলায় সচেতনতার অভাবে কৃষক জমিতে নিরাপদভাবে  কীটনাশক ব্যবহার না করায় এ অঞ্চলের কৃষকরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করার কোন উদ্দ্যেগ কারো নেই বলে কৃষকের অভিযোগ। জেলার দিগন্ত জুড়ে যে দিকে তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। ইতোমধ্যেই ঋতু শরৎকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে ধানের শীষে পড়ছে শীতের শিশির বিন্দু।

এদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভরশীল। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে মান্ধাতার আমলের চাষাবাদ পদ্ধতির পরিবর্তে সকল ক্ষেত্রে আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার এখনও ব্যাপক প্রসার ঘটেনি। জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে জমি চাষে এখন পাওয়ার টিলারের ব্যবহার ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য যন্ত্রপাতির তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না। ফলে কৃষক ফসলের চারা লাগানো আগাছা পরিস্কারসহ ফসল কাটা মাড়াইয়ের কাজ কৃষি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল। ফসল প্রতঙ্গ রোগ বালাই থেকে রক্ষায় বিভিন্ন সময় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। বেশি জমিতে এক সাথে কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাওয়ার স্প্রে ব্যবহার করা হয়।

কৃষক সাধারণত হ্যান্ড স্প্রে (হস্ত চালিত যন্ত্র) দিয়ে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। কীটনাশক প্রয়োগ করার সময় ম্যাক্স ও গ্লোবস ব্যবহার করার প্রয়োজন হলেও সচেতনতার অভাবে কৃষক ও কৃষি শ্িরমক এগুলো ছাড়াই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে। ফলে নাকও মুখ দিয়ে বিষ দেহে প্রবেশ করতে পারে এতে মাথা ঘোরাসহ নানা উপসর্গে ভোগেন কৃষক। কিন্তু এব্যাপারে গ্রামের কৃষক তেমন অবহিত নয়। সরেজমিনে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন কালে দেখা যায়, কোন নিরাপদ ব্যবস্থা ছাড়াই বিভিন্ন আবাদের ক্ষেতে কৃষক হ্যান্ড স্প্রে দ্বারা কীটনাশক প্রয়োগ করছিলেন।

জানা গেছে, গাছ বাড়ার জন্য ১৭টি মৌলিক পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। এসব পুষ্টি উপাদানের কিছু (হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বন) আসে পানি ও বাতাস থেকে। বাকি ১৪টি (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, গন্ধক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরিন, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, বোরন, দস্তা, তামা, মলিবডেনাম, কোবাল্ট) আসে মাটি থেকে। ১৯৫০ সালের পর থেকে মাটিতে মৌলিক পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের মাটির ৬-৭টি মৌলিক পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিয়েছে। আগামী ২০-৩০ বছর পর আরও ৩-৪টি পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বেশি ফলন পাওয়ার অভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ব্রজপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, কীটনাশক জমিতে দেয়ার সময় উদ্ভট গন্ধসহ্য করতে হয়। এছাড়াও ওষুধ প্রয়োগের পর মাথা ঘোরাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কিভাবে ওষুধ প্রয়োগ করলে কোন সমস্যা হবে না তা আমার জানা নেই। এব্যাপারে কখনও কেউ পরামর্শ দেয়নি। গ্রামের সকল কৃষক এভাবেই জমিতে কীটনাশক প্রায়োগ করেন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ জানান, প্রথমত আমরা কৃষককে কীটনাশক প্রয়োগ থেকে বিরত থাকারই পরামর্শ দিয়ে থাকি। আলোক ফাঁদের মাধ্যমে চাষাবাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। ওসমানি পদ্ধতিতে (ঔষধ, সময় মাত্রা ও নিয়ম মাফিক সঠিক প্রয়োগ) বিষ প্রয়োগের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ‘কৃষকরা জৈব সারের চেয়ে রাসায়নিক সার বেশি ব্যবহার করে। তবে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়, তার জন্য আমরা কাজ করছি।

(বিএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৩, ২০২১)