স্টাফ রিপোর্টার : প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আনিসুর ভুঞা এ তথ্য জানিয়েছেন। সাময়িক বহিষ্কৃত সেজান সিএসই বিভাগের ছাত্র। তবে তাৎক্ষণিক বাকিদের নাম জানা যায়নি।

সাময়িক বহিষ্কৃত বাকিরা হলেন- তাহামিদুল হক ইশরাক (সিই বিভাগ), সাদমান সাকিব (এলই বিভাগ), রাগিব আহসান মুন্না (এলই বিভাগ), মাহমুদুল হাসান (সিই বিভাগ), মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান (এমই বিভাগ), রিয়াজ খান নিলয় (সিএসই বিভাগ), ফয়সাল আহমেদ রিফাত (এমই বিভাগ) ও নাইমুর রহমান অন্তু (এমএসই বিভাগ)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। তাই অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো. সেলিম হোসেন। এরপর অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাদের মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। তাই এমন পরিস্থিতিতে ৩ ডিসেম্বর কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির সরকারি চাকরি হওয়ার পরপরই দলটি কয়েকটি উপ-দলে ভাগ হয়ে যায়। এর ভেতর একটি প্রভাবশালী উপ-দল বর্তমান কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নিয়ন্ত্রণে।

সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলে ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক ( ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যরা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।

একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে যান।

ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুর আড়াইটার দিকে প্রফেসর ড. সেলিম হোসেন বাসভবনে গিয়ে টয়লেটে ঢোকেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২১)