মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশের ঐতিয্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমাদের হাজার বছরের সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপি এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। এই সাফল্য অর্জন বাঙ্গালীদের সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত অর্জন। এই অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলতেন তার হাতে গড়া এই ছাত্রলীগ আর বাংলাদেশের ইতিহাস ও ছাত্রলীগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই এই সম্মেলন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ন। দেশ এক ক্লান্তিলগ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেত্রীত্ব তৈরি করবো। সেই নতুন নেত্রীত্ব দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবেন, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। আমি মনে করি জাতি এখনো ঐক্যবদ্ধ, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে। এই ধারাকে আমরা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে বাংলাদেশ আগামীতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে। কেউ এটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। দেশকে আমরা অস্থিতিশীল করতে দেব না। সারাদেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। এটি আমরা অব্যহত রাখবো।

আজ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, প্রায় ১ যুগ পর টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে সারা জেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ শহরের পৌর উদ্যানের সম্মেলন মঞ্চসহ ব্যানার, পোষ্টারে ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও টাঙ্গাইলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইন্দ্রনীল দের শর্মা বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে এটাই ছাত্রলীদের প্রক্রিয়া। এখানে সভাপতি পদে ২৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৮৩ জন দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেন। কিন্তু জমা দিয়েছেন সভাপভি পদে ১৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৭৫ জন। তাদের বয়স, ছাত্রত্বসহ জীবন বৃত্তান্ত যাচাই বাছাই করে দেখা হবে।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গের আলীগড় খ্যাত সরকারি সা’দত কলেজের দুইবারের ভিপি এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও জেলা ছাত্রলীগের এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ জেলা টাঙ্গাইলে আগামীতে যারা পদে আসবেন, তারা যেনো ছাত্রলীগের গৌরব ঐতিহ্য ধরে রেখে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবেন সেই প্রত্যাশা করি।

শনিবার শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ অওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মোঃআব্দুর রাজ্জাক এমপিও সম্মানিত অতিথি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইল জেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক।

উদ্বোধক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আল-নাহিয়ান জয় ও প্রধান বক্তা সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লেখক ভট্টাচার্য। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ভিপি মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের সভাপত্বিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম, আতাউর রহমান খান এমপি, মোঃ নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, মোঃ ছানোয়ার হোসেন এমপি, হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, খন্দকার মমতা হেনা লাভলী এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য , বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এ্যাড. মামুনুর রশিদ ।যুগ্ম আহ্বায়ক, টাঙ্গাইল জেলা তানভীরুল ইসলাম হিমেল, রনি আহমেদ, শাফিউল আলম মুকুল, রাশেদুল হাসান জনির সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন, দপ্তর সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইন্দ্রনীল দেব শর্মারনি, মানব সম্পদ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, উপ-গ্রস্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আলী ইমতিয়াজ সোহান , সহসম্পাদক মীর সাব্বির প্রমুখ।

জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক সম্মেলনহয় ২০১০ সালে ১৬ ফেব্রুযারি। এরপর ২০১৫ সালের ২৪ জুন সম্মেলন ছাড়াই ইশতিয়াক আহমেদকে সভাপতি এবং শামীম আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটি বাঁধার মুখে পড়লে ২০১৭ সালের ১৯ মে মোস্তাাফিজুর রহমান সোহেলকে আহ্বায়ক ও তানভীর ইসলাম হিমেল, রনি আহমেদ, শফিউল ইসলাম মুকুল, রাশেদুল হাসান জনি, শামীম আল মামুনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪৬ জনকে সদস্য করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।এ আহ্বায়ক কমিটিকে তিন মাসের জন্য অনুমতি এবং সম্মেলন করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু নানা জটিলতায় তারা সম্মেলন ও পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। তিন মাসের কমিটি চলছে সাড়ে ৪ বছর। ফলে সময়ের কারণে ছাত্রত্ব হারিয়ে অনেকে পদ বঞ্চিত হয়ে বিদায় নেন ছাত্রলীগ থেকে। আবার অনেকে বিয়ে করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করেছেন। জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোস্তাাফিজুর রহমান সোহেলকে বলেন টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের ২৭টি ইউনিট রয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র মধুপুর উপজেলার ছাত্রলীগ কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে।

এছাড়া প্রেসরিলিজ এবং কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে বাসাইল, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, গোপালপুর ওভূঞাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সখিপুর ও মির্জাপুরের কমিটি চলছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমোদনে। দেলদুয়ার, ধনবাড়ি, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রলীগ চলছে পুরাতন কমিটি দিয়ে।

(এসএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২১)