রিপন মারমা, রাঙামাটি : ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ জেলা রাঙামাটিকে সারাদেশের রেল লাইনের সাথে সংযুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া হয়ে রেলপথ যাবে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে। এর মাধ্যমে পাহাড়, লেক ও কর্ণফুলী নদীর সৌন্দর্য ঘেরা কাপ্তাই যেতে পযটকদের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম শহরের চন্দগাঁওয়ে জানালীহাট থেকে চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। ৪২ কিলোমিটারের ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হবে ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ১০৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭১৪১ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে।

রাঙামাটির কাপ্তাইকে রেল পথের সাথে সংযুক্তকরণে ৪২ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্তমান সরকারের আমলে এই উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে এটি পাহাড়ের সার্বিক জীবনমানে আমূল পরিবর্তন আনার পাশাপাশি পর্যটন খাতেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন বিনিয়োগের সমূহ সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কুমিরায় আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) পাশে শাটল ট্রেন সার্ভিসের নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলপথের সাথে রাঙামাটিকে সংযুক্ত করার ঘোষনা দেন। কাপ্তাইসহ রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকার উৎপাদিত পণ্য সহজে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বাজারজাতকরণ এবং পাহাড়ে আগত পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় রেল ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। রাঙামাটির পরপরই পার্বত্য অন্য দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানকেও ট্রেন যোগাযোগের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের।

তিনি আরোও জানান, মন্ত্রণালয় মহাপরিকল্পনার একটি অনুষজ্ঞ হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলে রেল যাতায়াত সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। “এ জন্য ‘জানালীহাট-চুয়েট-কাপ্তাই ডুয়েল গেজ সংযোগ রেললাইন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পে হাত দিয়েছে। ইতোমধ্যে এটির প্রাথমিক বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব পিডিপিপি তৈরি করা হয়েছে।” ২০১৮-২০১৯ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে এবং ডাবলগেজ রেল ট্র্যাকের একটি পরিকল্পনা নকশাও প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে নয়টি স্টেশন থাকবে রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান (২০১৬-২০৪৫) এর মধ্যে রয়েছে ২০২২ সালের মধ্যে কাপ্তাই পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করা। রেলওয়ে চলতি বছর প্রকল্পটির কাজ শুরু করে ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকার

রেল মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি দুই পর্যায়ে বাস্তবায়নের প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে চট্টগ্রামের জানালীহাট থেকে রাউজানের চুয়েট পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩১ কিলোমিটার রেল লাইন। পিডিপিপি অনুযায়ী প্রথম অংশের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সম্ভাব্য অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৮২৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে চুয়েট থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটারের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে দাতাদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৫৬ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। “৪২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ” এই প্রকল্পটির জন্য মোট ৬৪০ একর জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি প্রকল্পটির আওতায় ৩টি রেল সেতু, ২৫টি কালভার্ট এবং ৯টি স্টেশন নির্মাণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন উদ্বর্তন কর্মকর্তা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাঙামাটির পাশ্ববর্তি সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে। দেশে ৫৫টি নতুন রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলেই হবে ২৬টি।

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত রেললাইন যাবে। এরপর বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িতেও ট্রেন চালু করা হবে। এছাড়াও নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হবে।’

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হলে রাঙামাটি কেন্দ্রিক পর্যটন সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে। সেখানে নতুন বিনিয়োগ যুক্ত হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিশেষ করে পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সহজে সারাদেশে পাঠানো সম্ভব হবে।

(আরএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০২১)