বাগেরহাট প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ প্রভাবে জলোচ্ছাস ও ভারী বৃষ্টিপাত পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলা জেলে পল্লীর দুই কোটি টাকার বেশী শুঁটকি মাছের ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত চাল, গম ও সারসহ ১২ টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস সাময়িক বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। মেশিনারিসহ অন্যসব পন্য ওঠানামার কাজ দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মোংলা সমুদ্র বন্দরে এখনো তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগর উত্তাল থাকায় এখনো শতশত ফিশিং ট্রলার ও জেলে নৌকা সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। সোমবার বিকালেও একটানা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে করে দূর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এদিকে ভারী বৃষ্টিতে মোংলা উপজেলায় বেশ কয়েকটি চিংড়ির খামার ও বসত বাড়ি তলিয়ে যাওয়া খবর পাওয়া গেছে। 

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের সাগর পাড়ে ১৩টি চর নিয়ে দুবলা অস্থায়ী শুটকি পল্লী। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুটকি মৌসুমে বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লীতে প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ হাজার জেলে-মাহাজন শুঁটকি মাছ আহরণ করে থাকে। সাগর থেকে ধরা মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি করা হয়। শুটকির জন্য সুন্দরবনের এই দুর্গম চলে তারা গড়ে তোলের ৫ মাসের অস্থায়ী বসতি। জলোচ্ছাসে শুঁটকি পল্লীর জেলেদের ২ থেকে ৩ হাজার সাবাড়ে ( মাছ শুকানোর মাঠ) থাকা প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ সাগরে ভেসে গেছে, ৩ দিনের ভারী বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে আরো অনেক শুটকি মাছ।

প্রাথমিক হিসেবে জেলেদের দুই কোটি টাকার বেশী শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। এবার অসময়ে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের বৈরী আবহওয়া এখানকার হাজার হাজার জেলেরা চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। দুবলার চরের মাঝেরকিল্লা থেকে চট্টগ্রামের জাহিদ বহদ্দার ও শরণখোলার জেলে ইউনুস আলী ফকির সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে জানান, রবিবার রাতে ঘূর্ণীঝড় জাওয়াদ দুবলারচর অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এসময় প্রবল বর্ষণের সাথে ৪ ফুট উচ্চতা জলোচ্ছাসে মাঝেরকিল্লাসহ আশেপাশের চর সমূহর কোটি কোটি টাকার শুঁটকি মাছ সাগরে ভেসে গেছে। বৃষ্টির পানিতে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি মাছ ভিজে নষ্ট হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় জেলেদের অস্থায়ী ছাউনি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় জেলেরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

সুন্দরবনের মাঝেরকিল্লা শুটকি পল্লী থেকে শরণখোলার জেলে ইউনুস আলী ফকির বলেন, ঘূর্ণীঝড় জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছাসে বঙ্গোপসাগরের পানি বেড়ে ৩/৪ ফুট উচ্চতায় মাঝেরকিল্লাসহ আশেপাশের চর সমূহ ডুবে যায়। পানিতে সেখানের কোটি টাকার শুঁটকি মাছ ভিজে নষ্ট এবং বিপুল পরিমাণ মাছ সাগরে ভেসে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় জেলেদের অস্থায়ী ছাউনি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় জেলেরা দুর্ভোগে পড়েছেন বলে তিনি জানান।

দুবলার শুটকি পল্লীর মাহাজন রামপাল উপজেলার শহিদ মল্লিক বলেন, আবহওয়া খারাপ হওয়ার আগেই সাগর থেকে ধরে আনা ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্টিক টন কাঁচা মাছ এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কাল রাত থেকে বৃষ্টির তীবৃতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোয়ারের সময় চরের সবকিছু ডুবে যাচ্ছে।

সুন্দরনের দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, শনি ও রবিবার রাতে আলোরকোলে জেলেদের মাছ শুকানোর মাচা ও মাঠ ৩ থেকে ৪ ফুট পানির নীচে ডুবে যায়। এতে জেলেদের শুটকি প্রক্রিয়াকরনে ৩ হাজার সাবাড়ে ( মাছ শুকানোর মাঠ) থাকা প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কাঁচা মাছ ভেসে গেছে। ৩ দিনের ভারী বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে আরো অনেক শুটকি মাছ। পানিতে জেলেদের থাকার এবং রান্না করার স্থান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা শুঁটকি পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় মুঠোফোনে জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে দুবলার আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়ীয়া ও শ্যালারচর তিনফুটের বেশী পানির নীচে তলিয়ে গেছে। শুঁটকি পল্লীর জেলেদের ২ থেকে ৩ হাজার সাবাড়ে (মাছ শুকানোর মাঠ) থাকা প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ সাগরে ভেসে গেছে, ৩ দিনের ভারী বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে আরো অনেক শুটকি মাছ। প্রাথমিক হিসেবে জেলেদের দুই কোটি টাকার বেশী শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় এখনো শতশত ফিশিং ট্রলার ও জেলে নৌকা সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে সোমবার সকাল থেকে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত চাল, গম ও সারসহ ১২ টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস সাময়িক বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। মেশিনারিসহ অন্যসব পন্য ওঠানামার কাজ দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

(এসএকে/এসপি/ডিসেম্বর ০৬, ২০২১)