নওগাঁ প্রতিনিধি : “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে”। কবির সেই কথার সঙ্গে এখনকার বাস্তবের আর কোন মিল নেই। এখন বৈশাখ মাস চললেও নওগাঁ জেলার সকল নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েছে। নদীর বুকে যখন নৌকা চলার কথা। তখন সেই নদীর বুকে ট্রাক্টর চালিয়ে বালু সংগ্রহ করছে মানুষ। গরু-ছাগলও চরানো হচ্ছে নদী বক্ষে। শিশুরা বিকেল বেলায় নদীর বুকে ক্রিকেট খেলে উল্লাস প্রকাশ করে। তেমনী একটি নদী নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা নদীতে এখন হাঁটু জল তো দুরের কথা, হঠাৎ একজন মূমুর্ষূ রোগীকে ওষুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়লে পানি টুকুও নেই। এক কালের খরস্রোতা পুনর্ভবা এই নদীটি এখন শুধুই স্মৃতি আর মরা খাল। বুক ভরা বালি নিয়ে নদীটি এখন তার স্মৃতি বহন করে চলেছে মাত্র। নদী যেন পরিণত হয়েছে মরুভূমিতে।

জানা গেছে, নদীটি ভারতের দক্ষিন দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, কলমুডাঙ্গা, পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল উপজেলা সদর নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে।

এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এলাকার সকল রাস্তাঘাটগুলি অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময় এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের এক মাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকম নৌকা যোগে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকত। এমন কি বিয়ের বর যাত্রীদের নৌকার বহরও ছিল চোখে পড়ার মত। সেসময় এ নদীতে চলত মাল বোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গম সহ বিভিন্ন পন্য বহন করত চাঁপাইনবাব গঞ্জের রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকা যোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে বিভাগীয় শহর রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে নৌকা ভিড়ত। সে সময় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়ায় উজানের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যবস্থা। নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাক যোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেক টাই ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ন যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবেনা এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ন যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো এই নদীর পানি। উপকৃত হতো নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের জনসাধারনের কষ্টের কথা চিন্তা করে এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গা ও হাপানিয়া ঘাটে দু’টি ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এলাকাবাসী নদীটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
(বিএম/এএস/এপ্রিল ২৪, ২০১৪)