শেরপুর প্রতিনিধি : চোখের জলে সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধসে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নিহত ১১ জনকে স্মরণ করেছেন স্বজনরা। রানা প্লাজা ধসের এক বছর পূর্তিতে ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পৌর শহরের চকপাড়া গোরস্থানে জিয়ারত, কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল ও শোকসভার মধ্য দিয়ে নিহতদের স্মরণ করা হয়।


ভবন ধসে নিহত পৌর শহরের উত্তর চকপাড়া মহল্লার হালিমের মা, ছেলে সেলিম রানা ও মেয়ে মনিরার মা সালেহা বেগম অঝোর ধারায় কেবলই চোখের জল ফেলেন। পাশে দাঁড়িয়ে নিহত কন্যা রোকসানা ও ইমরান দম্পত্তির তিন বছরের শিশু সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে নিরবে কাঁঁদেন আনোয়ারা বেগম, হালিমের বিধবা স্ত্রী হেলেনা বেগম ও শিশু কন্যা ছন্দা। এভাবেই নালিতাবাড়ী উপজেলার ৬ পরিবারের চিরতরে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষদের চোখের জলে স্মরণ করেছেন তাদের স্বজনরা। তাদের প্রত্যেকের ভেতর রয়েছে স্বজন হারানোর বেদনা এবং নিহতদের রেখে যাওয়া সন্তান, স্ত্রী, ভাইবোন ও বৃদ্ধা মা-বাবার বেঁচে থাকা নিয়ে উৎকণ্ঠা। তারা বলেন, আমাদর এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই হয়তো অনেক শান্তিময় হতো।
কষ্টের পাশাপাশি ক্ষোভ ঝরে পড়ে ওই ঘটনায় সৌভাগ্যবশত, আহত হয়ে বেঁচে যাওয়া ওই মহল্লার ১১ জন শ্রমিকের। তারা বলেন, নারকীয় ওই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আমরা কোন মতে বেঁচে আছি। ঘটনার পর আমাদের বেতন ও বিকাশের মাধ্যমে তিনবার ১৫ হাজার করে টাকা পেয়েছি। ওই পর্যন্তই। এখন আমরা কোথাও চাকরিও পাই না। রানা প্লাজার শ্রমিক পরিচয় দিলে কারখানার মালিকরা চাকরি দিতে চায় না। কারণ হিসেবে তারা বলেন, রানা প্লাজার শ্রমিক হলে তাদের ক্ষতিপূরণ বা অন্যান্য কারণে ছুটি বেশি দিতে হবে।
নালিতাবাড়ীতে নিহতদের অধিকাংশেরই দাফন করা হয়েছে পৌর শহরের চকপাড়া গোরস্থানে। কয়েকজনকে নিজ নিজ গ্রামে ও মনিরাকে ঢাকার জুরাইন গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি হাবিবুর রহমানের পুত্র সেকান্দরের। সকালে চকপাড়া গোরস্থানে স্বজনরা কবর জিয়ারত করেন। পরে কোরান খতমের মধ্য দিয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় দোওয়া করা হয়। বিকেলে স্থানীয় আদর্শ ক্লাবের আয়োজনে নিহতদের স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলর জহুরুল হকের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হালিম উকিল। অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ হাকাম হীরা, সাংবাদিক আব্দুল মান্নান সোহেল, সাইফুল ইসলাম, অগ্রদূত সংঘের সভাপতি মোরাদ হোসেন টেটন।
নিহত ও আহত হয়েছিলেন যারা : সেদিনের ওই মৃত্যু কূপ থেকে জীবিত ফিরতে পারেন নি নালিতাবাড়ী উপজেলার চক পাড়া মহল্লার মন্নাফ মিয়ার পুত্র সেলিম রানা (২৮), কন্যা মনিরা (২০) , পুত্রবধূ রহিমা বেগম (২৪), হারেজ আলীর পুত্র আব্দুল হালিম (২৮), আব্দুর রশীদের কন্যা রোকসানা আক্তার রণি (২২), জামাতা ইমরান (২৬), হাবিবুর রহমানের পুত্র সেকান্দর (২৬), সেন্টু (২৪), মধ্যমকুড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিনের কন্যা আসমা (২৬), পিঠাপুণি গ্রামের সুরুজ আলীর পুত্র কাউসার (১৯)। আর যারা মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে এসেছেন, তারা হলেন, চক পাড়া মহল্লার মৃত আব্দুল আজিজের পুত্র আব্দুল মজিদ, তার পুত্র ফারুক, খোরশেদ, আব্দুল মন্নাফের কন্যা মানছুরা, কুতুব উদ্দিনের পুত্র মফিজুল, আক্তার হোসেনের পুত্র মাসুদ রানা, হারেজ আলীর পুত্র হামজা, মকবুল হোসেনের পুত্র ফিরোজ, কদমতলী গ্রামের আনার আলীর পুত্র লিটন, নুরমোহাম্মদের পুত্র লেবু, গেরাপচা গ্রামের রাজা মিয়ার পুত্র নাজমূল।
(এইচবি/এএস/এপ্রিল ২৪, ২০১৪)