রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী শিপ্রা ঘোষকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী কার্তিক ঘোষকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অপর ৫ আসামীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রবিবার  দুপুরে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আযম এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিত আসামী কার্তিক কুমার ঘোষ (৪০) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের তেজেন্দ্র নাথ ঘোষের ছেলে।

খালাস হওয়া অপর পাঁচ আসামীরা হলেন কার্তিকের বোন চায়না ঘোষ, মা জুথিকা ঘোষ, চাচাত ভাই সুভাষ ঘোষ, ভগ্নিপতি জয়দেব ঘোষ ও বড় বোন সুন্দরী ঘোষ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন রাজেন্দ্রপুর গ্রামের তেজেন্দ্রনাথ ঘোষের ছেলে দুধ বিক্রেতা কার্তিক ঘোষের সঙ্গে খুলনা জেলা শহরের দোলখোলা এলাকার গোসাই চন্দ্র ঘোষের মেয়ে শিপ্রা ঘোষের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে কার্তিক ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের দাবিতে শিপ্রাকে নির্যাতন করতো। ২০১০ সালের ১৩ মে রাত ১১টার দিকে যৌতুকের দাবীতে স্বামী কার্তিক ঘোষসহ তার পরিবারের লোকজন তার স্ত্রী শিপ্রা ঘোষকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের মা খুলনা জেলা শহরের দোলখোলার নমিতা ঘোষ পাটকেলঘাটা থানায় পরদিন কার্তিকসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের নাম উলে­খ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক)/৩০ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পাটকেলঘাটা থানার উপপরিদর্শক মোঃ নাসিরউদ্দিন ওই বছরের ১৩ অক্টোবর কার্তিক, বোন চায়না, মা জুথিকা ও চাচাত ভাই সুভাষ ঘোষের নাম উলে­খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যদিও পরবর্তীতে আদালত অপর দু’ আসামী সুন্দরী ঘোষ ও তার স্বামী জয়দেব ঘোসকে আইন আমলে নিয়ে ছয় আসামীর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক)/৩০ ধারায় অভিযোগ গঠণ করা হয়। মামলার ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত ১৮ জনের সাক্ষী গ্রহণ করে।

মামলার নথি ও ১৮ জন সাক্ষীর জেরা জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী কার্তিক ঘোষের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেন। একই আদেশে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অপর পাঁচ আসামী যথাক্রমে বোন চায়না ঘোষ, মা জুথিকা ঘোষ, চাচাত ভাই সুভাষ ঘোষ , ভগ্নিপতি জয়দেব ঘোষ ও বড় বোন সুন্দরী ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন। রায় প্রদানকালে সকল আসামী আদালতের কাঠ গোড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

রায় ঘোষণার পর কার্তিকের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

তবে অভিযুক্ত কার্তিক ঘোষকে প্রিজনভ্যানে তুলে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, স্ত্রী শিপ্রা আত্মহত্যা করেছে। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তৎকালিন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মধুসুধন মণ্ডল, ডা তৌহিদুর রহমানসহ তিন ডাক্তার বাদিপক্ষের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে নিয়ে হত্যা উলে­খ করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে।

তবে ডাঃ মধুসুধন মণ্ডল বলেন, যারা অপরাধ করে তারা পাগলের প্রলাপ বকে। তাই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে কার্তিক।

এদিকে আদালতের বারান্দায় উপস্থিত থাকা নমিতা ঘোষ বলেন, মেয়ে শিপ্রা হত্যার রায় ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠিত করেছে। উচ্চ আদালতে এ রায় বহুল থাকবে বলে তিনি আশাবাদি।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এ্যাড. জহুরুল হায়দর বাবু। অপরদিকে আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাড. এসএম হায়দর আলী ও অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুল বারী।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ১২, ২০২১)